জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
জগন্নাথপুরে বন্যা
পানির নিচে ৩ হাজার হেক্টর জমি, ক্ষতিতে হাজারো কৃষক
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে আকস্মিক বন্যায় কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে তীরবর্তী তিন ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক কৃষকের রোপণ করা আমন ধান ১০ দিনের বেশি সময় ধরে পানির নিচে রয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে প্রায় আট শতাধিক হেক্টর জমির আমন ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় এক হাজার প্রান্তিক কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, উপজেলার মধ্যে পাইলগাঁও, রানীগঞ্জ ও আশারকান্দি ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকে রোপা-আমন ধান চাষাবাদের প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমি এখনো নিমজ্জিত। এরমধ্যে রোপণ করা জমির পরিমাণ প্রায় ৮৫০ হেক্টর। বন্যার পানিতে চাষের জমি নিমজ্জিত থাকায় এখনো রোপণ করা হয়নি। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চারা সংকট ও জলাবদ্ধতার কারণে চলতি মৌসুমে বেশির ভাগ জমিতে আমনধান রোপণ করা সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামের সামসুল ইসলাম বলেন, ১০ হাজার টাকা খরচ করে ধান লাগিয়ে ছিলাম। রোপণের তিনদিন পরেই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এখন টাকা দিয়ে ধানের চারা কিনে আবারও রোপণ করছি।
আলমপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়া বলেন, ১০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হইছে। জমিতে এখনো পানি রয়েছে। চারা সংকটে এবার আর রোপণ করা সম্ভব হবে না। পাইলগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের কৃষক জাহির আলী বলেন, ঋণের টাকা দিয়ে চারাগাছ কিনে ধান রোপণ করেছিলাম, সবই পানিতে নষ্ট হয়েছে।
গোতগাঁও গ্রামের কৃষক শায়েস্তা মিয়া বলেন, ঋণ করে চাষ করা চার বিঘা জমির ধান পানির নিচে।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাস বলেন, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রৌয়াইল ব্লকে প্রায় ৩০০ হেক্টর আমন ধান চাষের জমি প্রস্তুত করা হয়েছিল এরমধ্যে ১৮০ হেক্টর রোপণ করা জমির চারাধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে চারা সংগ্রহ করে জমি রোপণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।
পাইলগাঁও ইউনিয়নের দুইটি ব্লকের দায়িত্ব থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমীর আফজাল বলেন, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী তিনটি বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে প্রায় ৬৮০ হেক্টর রোপণকৃত আমন ধানের জমি নিমজ্জিত হয়েছে, এবং প্রায় ৩৬০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে এখনো রোপন করা হয়নি। যে সব জমির চারাধান ভেসে উঠছে সেই জমির কৃষকদের রিকভারি করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, এক হাজার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ধান চাষাবাদের উপযুক্ত সময় রয়েছে। দ্রুত বীজতলা তৈরি করে পুনরায় রোপণ করা হলে কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।
"