চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
শিবগঞ্জে ৬৫০ গ্রাহক ১১ দিন বিদ্যুৎহীন
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের সাড়ে ৬০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। পদ্মা নদীতে স্রোতের তীব্রতায় দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়ায় ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। এতে উপজেলার পাকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া চরে গত ১১দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতায় বিপাকে পড়েছেন এখানকার মানুষ।
জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট দুপুর থেকে ওই চরে গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্র বলছে, নদীর পানি কমলেই অফগ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করা হবে। এ লাইন মেরামতে প্রায় মাস খানেক সময় লেগে যেতে পারে পারে।
জানা গেছে, পদ্মা নদীর ওপারের এলাকাটিকে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ভাষায় ‘অফগ্রিড এলাকা’ বলা হয়। ২০২১ সালের নভেম্বরে ওইসব এলাকায় সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুতায়ন করা হয়। নদী ভাঙনের ফলে সাবমেরিন ক্যাবলে সমস্যা দেখা দিলে শিবগঞ্জ উপজেলার নিশিপাড়া চরের মানুষজন সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ওই এলাকায় বিদু্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সুপারিশে নিশিপাড়া চরে বিকল্প ব্যবস্থায় বিদু্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে শিবগঞ্জের সাত্তারঘাট এলাকা দিয়ে ১১ কেভি ওভারহেড লাইন নির্মাণ ও এক কিলোমিটার সাব-মেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়। এ বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে ওই লাইন দিয়ে কানসাট বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ফিডের মাধ্যমে ওই চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, আকস্মিক পদ্মায় পানি বৃদ্ধি হলে স্রোতের তীব্রতায় শিবগঞ্জের সাত্তারের ঘাট এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে সেখানে থাকা একজোড়া বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়ে। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২৬ আগস্ট দুপুর থেকে অফগ্রিড এলাকা নিশিপাড়া চরে প্রায় ৬৫০ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানান, নিশিপাড়া চরে ভাঙনকবলিত মানুষের বসবাস। এখানে আছে বাবুপুর, কদমতলা, সেতারাপাড়া, চরলক্ষ্মীপুরসহ অন্তত ৭টি মহল্লা। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবাহ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে তাদের।
স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়ায় এখন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। এতে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। এ কারণে অনেক কাজ আটকে আছে। বাচ্চাদের লেখাপড়ার
বেশি সমস্যা হচ্ছে। তারপরে গরম তো আছেই।
অটোরিকশাচারক শরিফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন ধরে অন্ধকারে আছি। উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম অটোরিকশায় চার্জ দিতে পারছি না। যার কারণে আয় রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে।
মুদি দোকানি সালাহউদ্দীন বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজের খাবার-দাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন এখানকার অন্যান্য দোকানিরাও।
শিবগঞ্জের পাকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় দুটি খুঁটি হেলে পড়ে যায়। ওই জায়গাটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মাইকিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর থেকে নিশিপাড়া চরের মানুষজন খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে। বিষয়টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির লোকজনকে জানানো হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, পদ্মা নদীর স্রোতের তোড়ে দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে শুকনো জায়গা না থাকায় লাইনটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীর পানি কমে গেলেই লাইনটি মেরামত করে নিশিপাড়া চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে। লাইনটি মেরামতে প্রায় মাস খানেক সময় লাগতে পারে বলেও ধারণা করছেন এই প্রকৌশলী।
"