হায়দার আলী, পঞ্চগড়
পঞ্চগড়-আটোয়ারী
খোয়া বিছানোর ৫ বছরেও হয়নি সড়কের কাজ
দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান * সড়কটিতে চার-পাঁচ হাজার লোকের যাতায়াত
পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়ী এলাকায় ১ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তায় ইটের খোয়া বিছানোর পর আর কাজ করা হয়নি। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, গর্ভবতী ও স্থানীয় কৃষকদের কৃষি পণ্য পরিবহনে সমস্যায় পড়তে হয়।
সরজমিনে ওই সড়কে দেখা হয় ভ্যানচালক নাজমুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই সড়কে চলাচল করতে খুবই কষ্ট হয়। কেউ ভ্যানে উঠলে আগের ভাড়ায় দেয়। বাড়তি ভাড়া কেউ দিতে চায় না। রাস্তাটি পাকা হলে চলাচল করতে সুবিধা হবে ।
উত্তর প্রধান পাড়া গ্রামের যুবক শাহিন বলেন, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন চার-পাঁচ হাজার লোক যাতায়াত করে। আমাদের এই রাস্তাটি দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে পড়ে আছে। রাস্তাটি একেবারে চলাচলের অনুপযোগী।
মাগুড়া বাঁশবাড়ী গ্রামের শিমু বলেন, এই রাস্তাটার জন্য আমাদের এলাকায় ভ্যান-রিকশা কিছু আসতে চায় না। চলাফেরা করতেও খুব কষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ৪-৫ বছর আগে এই সড়কে ইটের খোয়া ফেলে রাখে কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে আর বাকি কাজ শেষ করেনি। বাঁশবাড়ী গ্রামের বৃদ্ধ মফিজ উদ্দিন বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমাকে সবসময় যেতে হয়। রাতে সাইকেলে চড়ে যাওয়া যায় না। সাইকেল নিয়ে হেঁটে যেতে হয়। রাস্তাটি খারাপ হওয়ায় কত মানুষ অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে যায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পঞ্চগড় সদর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওই সড়কের কাজ সমাপ্ত করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি বন্ধ রাখে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পঞ্চগড় সদরের উপসহকারী প্রকৌশলী কৃষ্ণ চন্দ্র রায় জানান, ২০২১ সালে পঞ্চগড়-আটোয়ারী আরএইচডি সড়কের পঞ্চগড়-আটোয়ারী সওজ রাস্তার পূর্ব প্রধান পাড়া উচ্চবিদ্যালয় রাস্তা ভায়া বাঁশবাড়ি ও বকুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক কিলোমিটার (চেইনেজ ১০০০ মিটার) সড়কের উন্নয়ন কাজের ব্যয় ধরা হয় ৬১ লাখ ৪২ হাজার ৫৫৩ টাকা। তিনি আরো জানান, পঞ্চগড়ের কে হাসান এন্টার প্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার কামরুল হাসান কাজ পায়। ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর কাজ শুরু হয় এবং ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর কাজটি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু দুইবার কাজের মেয়াদ বাড়ানো হলেও শেষ করতে পারেনি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমবার ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয়বার মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর। সবশেষ ২০২১ সালের জুন মাসে কাজ বন্ধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে ঠিকাদার কামরুল হাসানের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি তা রিসিভ করেননি।
পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, সড়কটির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের জন্য নতুন ঠিকাদার নির্ধারণের টেন্ডার (দরপত্র) আহ্বান করার অনুমোদন চেয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে পত্র পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।
"