রুহুল আমিন রিপন, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনিসংহ)

  ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ

ক্লিয়ারেন্স-জিডিতে আটকে থানা বাড়ছে চুরি, নানা অভিযোগ

এজহার চলে যাচ্ছে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে, নথিভুক্ত হচ্ছে না মামলা * আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এখনো দহরম-মহরম থাকার অভিযোগ * অভিযোগ অস্বীকার করে কার্যক্রম স্বাভাবিক দাবি ওসির

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট অচল অবস্থা থেকে এখনো বের হতে পারেনি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানা-পুলিশ। এজহার দেওয়ার পরও নথিভূক্ত (রেকর্ট) হচ্ছে না মামলা। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আর সাধারণ ডায়েরিতেই (জিডি) আটকে আছে থানার কার্যক্রম। এতে উপজেলায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি দেখা দিয়েছে। বিভিন্নস্থানে হামলা, ভাঙচুর, চুরি, দখলদারির উপদ্রবও বেড়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তারের দৃষ্টিতে আনলে, তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দহরমণ্ডমহরম থাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে এজহার দিলেও তা মামলা হিসেবে নথিভূক্ত হচ্ছে না। উল্টো এজহার দেওয়ার পরই তা চলে যাচ্ছে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে। এমনকি কিছু কিছু জিডিও তদন্তের নামে এন্ট্রি না করে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার যাদের নামে মামলার এজহার দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গেই আঁতাত করেছেন পুলিশ সদস্যরা। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমানসহ জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীসহ স্থানীয় লোকজন।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সংঘর্ষ ও থানায় হামলায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর পর বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে বাহিনীটি। তবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নির্দেশে ১২ আগস্ট মধ্যে সব পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী অন্যান্য থানার মতো ঈশ্বরগঞ্জেও পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে যোগ দিলেও তাদের তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়ছে না।

ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জিডি, মামলার এজাহার গ্রহণ ছাড়া খুব বেশি কাজ করছে না পুলিশ সদস্যরা। এ কারণে থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা অবনতি দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্নস্থানে হামলা, ভাঙচুরসহ চোরের উপদ্রবও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পৌর এলাকায় চুরি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেক জায়গায় লুটপাট, দখলবাজি চলছে।

উপজেলায় ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের একজন এহসানুল হক মিলন বলেন, ‘ঈশ্বরগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি বাদী-বিবাদী উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেন, তাই ভুক্তভোগীরা ন্যায্য বিচার পাচ্ছে না। বর্তমানে থানার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গত ৪ ও ৫ আগস্ট পৌর বাজারের পুরাতন গোহাটায় (কাঁচাবাজার) আমার ৪৪টি দোকান ভাঙচুরের বিষয়টি নিয়ে ২৬ আগস্ট একটি এজহার দেই। এখন পর্যন্ত থানা থেকে কোনো পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি, মামলাটিও রেকর্ড হয়নি। উল্টো আমার মামলা রের্কডের আগেই আসামিদের হাতে এজহারের কপি পৌঁছে গেছে।’

হারুন অর রশিদ অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার (ওসি) এখনো দহরমণ্ডমহরম রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে এজহার গেলে তিনি তা রেকর্ট করছেন না। আমার দায়ের করা এজাহার তদন্ত না করেই রেকর্ড করতে অপরাকতা প্রকাশ করেছেন।’

ভুক্তভোগী সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমার বাবাকে মারধরের একটি মামলা করেছিলাম। আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের খবর দিলেও পুলিশ আসামি ধরতে যায়নি। পরে আরেকটি জিডি দিলেও তারা তা রেকর্ড করেনি। উল্টো আসামিরা থানায় এসে পুলিশের সঙ্গে খোশ-আড্ডা দিতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে কথা বললে উল্টো আমাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্চরগঞ্জ থানার একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন পুলিশকে আর মানছে না। কোনো ধরনের অপরাধের তথ্য পেলেও নিজ উদ্যোগে আমরা অভিযানে যেতে পারছি না আতঙ্কে। সেনাবাহিনীর দল সঙ্গে নিয়ে আমাদের অভিযানে যেতে হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি, পুলিশের কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে।’

জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেন ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সত্য নয়। থানার কাযর্ক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close