চাঁদপুর প্রতিনিধি
শাহরাস্তিতে বন্যা
১০ দিনে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় গত ১০ দিনের বন্যার পানিতে সাড়ে ৪ হাজার কৃষকের ৩৪১ হেক্টর জমির রোপা আউশসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমনের বীজতলা। লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে আমন আবাদের ক্ষেত্রে। এতে কৃষকদের ৬ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষতির আশঙ্কা জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন উপজেলার সূচিপাড়া উত্তর, সূচিপাড়া দক্ষিণ, রায়শ্রী উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়ন এবং আশপাশের এলাকা ঘুরে ক্ষতির সম্মুখিন ফসলের জমিগুলো চোখে পড়ে। এসব এলাকায় বড় বড় মাঠ জুড়ে রয়েছে রোপা আউশ। তবে অধিকাংশই পানির নীচে তলিয়ে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, বন্যায় উপজেলার ১২৯ হেক্টর জমির রোপা আউশ, বীজতলা ২০ হেক্টর, আবাদকৃত আমন ১৩৩ হেক্টর ও শাক সব্জি ৫৯ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৪১জন।
শাহরাস্তি রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা উনকিলা গ্রামের কৃষক কেরামত আলী বলেন, আমার এক একর জমিতে আউশের আবাদ আছে। ধান কর্তনের সময় হয়েছে। কিন্তু এখন সবই শেষ। বসতঘর ও রাস্তায় পানি। আমাদের এই ক্ষতির কি হবে বলতে পারছি না।
একই এলাকার দুলাল নামে আরেক কৃষক বলেন, এবছর তিনিও এক একরের অধিক জমিতে রোপা আউশ আবাদ করেছেন। তার জমিগুলোও এখন পানিতে তলিয়ে। গাছের চিহ্নও দেখা যায় না। ঋণ করে টাকা নিয়ে জমিতে বিনিয়োগ করেছেন। এখন তিনি অনেকটা দিশেহারা।
শহীদ উল্লাহ নামে আরেক কৃষক বলেন, ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালে বন্যা হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের হয়নি। এবারের বন্যায় আমাদের ফসলসহ সব ধরণের ক্ষতি হয়েছে। বসতঘর, রাস্তা ও ফসল সবকিছু শেষ। বহু কৃষকের ধান পচেগেছে। অনেকেই পানির নীচ থেকে ধান
কেটেছেন। কিন্তু ধান খুবই কম। সব মাটিতে পড়েগেছে।
সূচিপাড়া উত্তর ইউনিয়নের দইকামতা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, তাদের এলাকার সব ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে আছে গত ১০দিন। পানির উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট। ফসলের এই ধরণের ক্ষতি গত এক দশকেও হয়নি। আউশ কেউ কাটতে পারেনি। আমনের বীজতলা পানির নীচে। শাকসব্জি কিছু অবশিষ্ট নেই। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন এলাকার কৃষক।
শাহরাস্তি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার জানান, গত প্রায় ১০ দিনে উপজেলার বন্যা কবলিত ইউনিয়নের মাঠ জরিপে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৪ হাজার কৃষকের তথ্য পেয়েছেন। রোপা আউশসহ বিভিন্ন ফসলে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রাথমিক ক্ষতির আশঙ্কা আছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে। একই সঙ্গে তাদের আগামীতে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।
"