প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
সৈয়দপুর-মিরসরাই-হরিরামপুর
মেয়র-চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে সেবা পেতে ভোগান্তি
নীলফামারীর সৈয়দপুরে পৌর মেয়র আত্মগোপনে * চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রায় ১৬ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে
নীলফামারীর সৈয়দপুরে পৌর মেয়র, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রায় ১৬ ইউপি চেয়ারম্যান ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ইউপি চেয়রম্যানরা আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানা যায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরই নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী গা ঢাকা দিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট থেকে পৌর মেয়র কার্যালয়ে না আসায় জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশনামা, চারিত্রিক সনদসহ বেশ কিছু সেবা কার্যক্রম নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা। তবে কাউন্সিলর এবং পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। মেয়র রাফিকা আকতার পৌর মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌরমেয়র এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রয়াত আকতার হোসেন বাদলের স্ত্রী।
গতকাল সোমবার পৌর ভবনে গিয়ে দেখা যায় মেয়র রাফিকা আকতার জাহানের কক্ষে তালাবদ্ধ। অনুপস্থিত প্যানেল মেয়র শাহিন হোসেনও। কয়েকজন সেবাগ্রহীতা বসে আছেন মেয়রের কক্ষের সামনে। কিন্তু দেখা না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক কর্মচারী জানান, দু-একজন বাদে অন্যান্য কাউন্সিলরা নিয়মিত আসছেন। কিছু কিছু সেবা আছে যা পৌরমেয়র ছাড়া দেওয়া সম্ভব নয় বলে সেবা পাচ্ছেন না অনেকেই।
সেবা নিতে আসা ইমতিয়াজ হোসেন নামের একজন বলেন, জমির ওয়ারিশনামা দরকার। তিনদিন ধরে পৌরসভায় ঘুরছি। কিন্তু পৌর মেয়র নেই বলে তা পাচ্ছি না। এ অবস্থায় আমার সমস্যার সমাধানও হচ্ছে না। রাজিয়া সুলতানা নামের অপর একজন বলেন, ছেলের জন্মসনদ সংশোধ করার জন্য ৫ দিন ধরে ঘুরছি।কিন্তু সমাধান পাচ্ছি না।
পৌর শহরের একাধিক ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সৈয়দপুরে গত পৌরসভার নির্বাচন যেভাবে হয়েছে তা ন্যক্কারজনক। পৌরসভা সৃষ্টির পর এমন নির্বাচন দেখেননি তারা।
সৈয়দপুর পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন পাপ্পু বলেন, আমরা যারা কাউন্সিলরা আছি তারা নিয়মিত পৌর কার্যালয়ে আসছি।
সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুর জামান বলেন, জুলুমবাজ সরকারকে পতন করেছেন ছাত্র জনতা। বর্তমানে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছেন। মেয়রের অনুপস্থিতে সেবা নিয়ে তেমন কোনো জটিলতা হচ্ছে না এবং হবেও না বলে জানান তিনি।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের মিসরাইয়েও স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেবা-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। এখানকার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ২টি পৌরসভার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়ায় এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গতকাল সোমবার সরেজমিন উপজেলার মিরসরাই পৌরসভা, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদ ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে দেখা যায়, এখানে উদ্যোক্তা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা উপস্থিত থাকলেও নেই কোনো জনপ্রতিনিধি।
পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বর্তমানে পূর্বের স্বাক্ষর করা নাগরিক সনদ দিতে পারছি। বাকি সেবা সমূহ সম্পর্কে চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন জনগণ সেবা নিতে আসলে আবেদন জমা নিতে।’
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, এখানেও উদ্যোক্তা-প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ পরিষদের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও নেই জনপ্রতিনিধিরা। ৫ আগস্টের পর তারা সকলেই আত্মগোপন করেছে। এতে সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চি হচ্ছে। পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাঞ্চন কান্তি পাল বলেন, ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিন শতাধিক জনগণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেবা-পরিসেবা নিতো। বর্তমানে জনপ্রতিনিধিরা না থাকায় প্রতিদিন ৫-৬ জনকে সেবা প্রদান করা যাচ্ছে। তবে আমরা আমাদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব সাহেব থেকে শহরে গিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে এসে কিছু সেবা দিতে পারছি।’
মিরসরাই পৌরসভায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে দপ্তরের অভ্যন্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারে বসে থাকলেও নেই আগের মতো সোরগোল মানুষের আনাগোনা। খবর নিয়ে যানা যায়, এখানেও সেবা ব্যাঘাত হচ্ছে।
গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত পৌর কার্যালয় পরিদর্শন করেন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন ও সেনা কর্মকর্তারা। ইউএনও বলেন, ‘আমরা বারইয়ারহাট পৌরসভা কার্যালয় পরিদর্শন করেছি। সেখানে উদ্যোক্তা কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হয়েছে-অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা হয়েছে। দ্রুত পৌরসভার কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গত ৭দিন ধরে উধাও। ভোগান্তির শিকার বিভিন্ন সনদ গ্রহীতারা। গত ৪ দিন ধরে উপজেলার বলড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন খান কুন্নুর দেখা মিলছে না। জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়পত্রের সংশোধন, প্রত্যয়নপত্র, চকিদারী ট্যাক্সসহ বিভিন্ন সেবা নিতে আসা জনগণকে ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। উল্লেখ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারাদেশে ১ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু হওয়ার সাথে সাথে আত্মগোপনে গা ঢাকা দেন মোসলেম উদ্দিন খান কুন্নু।
সেবা নিতে আসা বলড়া গ্রামের রাহিমা বেগম বলেন, ‘জমির খারিজ করতে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট লাগবো, কয়েকদিন পরিষদে আইলেও কারো দ্যাহা পাইতাছি না, খারিজও করার পারতাছি না।’
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী পন্থী মোসলেম উদ্দিন খান কুন্নু সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ১ দফা দাবি আদায়ের সময় থেকেই আত্মগোপনে আছেন তিনি। তবে মাঝেমধ্যে তার নিজস্ব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সততা ব্রিকস ফিল্ডে সময় দেন। কিন্তু পরিষদ বসতে দেখা যায় না তাকে।
এ বিষয়ে মোসলেম উদ্দিন খান কুন্নুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
"