মেহেরপুর প্রতিনিধি
৬০ পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণ
মেহেরপুরে অভিযোগ
মেহেরপুরে গত দুই বছরে চাষযোগ্য সমতল জমিতে দুই শতাধিক পুকুর খনন হয়েছে গ্রাম পর্যায়ে। জেলা শহরে ৬৫টি পুকুরের মধ্যে ৬০টি পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মিত হয়েছে। অন্যগুলো এখনো দখল বা ভরাট করে ভবন নির্মিত না হলেও পানিশূন্য। এতে আগুন থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত পানিও পাওয়া যায় না অভিযোগ পৌর মেয়র ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পৌর অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় একযুগ আগেও ৬৫টি পুকুরে বার্ষিক ১৬০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হতো। যা পৌরবাসীর প্রোটিন চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখতো। পুকুর ভরাটের কারণে মাছ উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার সংস্কৃতি কর্মী মাহবুবুল হক মন্টু, আনোয়ারুল হক কালু, শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু, স্থানীয় যুবক শরিফুল ইসলাম, মোজাম্মেল হোসেন জানান, ফায়ার সার্ভিসও আইনগতভাবে পুকুর ভরাট বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তারাও পুকুর ভরাট বন্ধে এ পর্যন্ত কোনো ভূমিকা রাখেনি। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণে আইন থাকলেও তার ছিটে ফোঁটাও প্রয়োগ নেই। যে যার ক্ষমতা দিয়ে জলাধারগুলো ভরাট করে ফেলেছে। ফলে পানির উৎস দিন দিন কমছে।
সরকারি জরিপ অনুযায়ী, জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে আবাসন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত তিন দশকে সরকারি ও বেসরকারি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। যে কয়েকটি খাল ও পুকুর এখনো দখল বা ভরাট হয়নি, সেগুলো ময়লা-আবর্জনার স্তুপে ঠাসা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে সংরক্ষিত পানির বাইরে পানির বড় উৎস না পাওয়ায় আগুন নেভাতে গিয়ে বিপাকে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অভিযোগ জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালকের। এদিকে মেহেরপুর সদর উপজেলায় ৯৯৪টি পুকুর থাকলেও সেগুলো জনবসতি এলাকা থেকে দুরে। সেগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ হয়। এতে আগুনের ঘটনায় কোনো কাজে আসেনা ওইসব জলাধার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুর পৌর এলাকায় ৬৫টি পুকুর থাকলেও কোনটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি কলেজ, পুলিশ লাইনে পুকুর থাকলেও সেগুলোতে কোনো পানির অস্তিত্ব নেই।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, পুকুর ভরাট করে অনেকে ভবন নির্মাণে নক্সা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন। পুকুর থাকায় নক্সা অনুমোদন করা হয়না। কিন্তু ঢাকা থেকে অনুমোদন নিয়ে আসে। তখন পৌরসভার কিছুই করার থাকেনা। এ কারণেই শহরে যেসব পুকুর ছিল, সেগুলো আর নেই।
পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের অনুমোদন না পাওয়া নুর হোসেনের অভিযোগ, নগর উদ্যানের পূর্বদিকে পৌরসভার নিজস্ব একটি পুকুর ছিলো। পৌর পানিশাখার অফিস নির্মানের প্রয়োজনে ওই পুকুর ভরাট করে পাকা স্থাপনা করা হয়েছে। তাহলে পৌর নাগরিকদের জন্য পৃথক আইন চরমভাবে বিমাতাসুলভ।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক সাকরিয়া হায়দার জানান, চলতি বছরে সদর উপজেলায় ৭৪টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। নিজস্ব দুটি গাড়িতে সাড়ে ৮০০ লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা। ছোট খাটো আগুন লাগার ঘটনায় এই রিজার্ভ পানিই যথেষ্ট। তবে বড় দুর্ঘটনার সময় তাদের পানির জন্য বিপাকে পড়তে হয়। এমসব সময় নিকটবর্তী স্থানে জলাধারের অভাব অপরদিকে শহরের সরুপথ আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের জন্য অন্তরায়।
আইনের ফাঁক গলিয়ে কীভাবে পুকুর ভরাট হচ্ছে, তারও উদাহরণ হিসেবে পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন জানান, জলাধার রক্ষা আইন অমান্য করলে যে সাজা দেওয়া হয় তা খুবই কম। একটি পুকুর ভরাট করে যদি কয়েক কোটি টাকার সুবিধা পাওয়া যায়, কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও অনেকেই পুকুর ভরাট করে জরিমানা গুনবে। এ জন্য ২০০০ সালে আইন হওয়ার পরও অনেক পুকুর ভরাট হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের তত্বাবধানের যেসব পুকুর ও জলাধার আছে, সেগুলোও ভরাট হচ্ছে।
"