ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ৪ দিন সড়কে শিক্ষার্থীরা
দোহার-ধনবাড়ী-রায়পুরা-সিরাজগঞ্জ-কামারখন্দ
চতুর্থদিনের মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবারও ঢাকার দোহার, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, নরসিংদীর রায়পুরা, সিরাজগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা কাজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। চতুর্থ দিনের মতো গত শুক্রবার সকাল থেকে দুই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, হাট-বাজারের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোহার উপজেলার থানার মোড়, কলেজ মোড়, করম আলী মোড় এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের চৌরঙ্গী, মাঝিকান্দা ও বান্দুরা ব্রিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। যানবাহন চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ করেন তারা। এতে দোহার ও নবাবগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। কাঁধে ব্যাগ ও জাতীয় পতাকা শরীরে জড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, যেহেতু দেশ আমাদের তাই পরিবেশ সুন্দর রাখার দায়িত্বও আমাদের নিতে হবে। এ সময় ট্রাফিক আইন মানতে এবং যত্রতত্র ময়লা না ফেলতে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেন তারা।
ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী শহরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে যানজট নিরসনের জন্য তাদের কাজ করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে অবস্থান নিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। কারো হাতে লাঠি, মুখে বাঁশি। ট্রাফিক পুলিশের মতো ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন তারা। এদিকে রাস্তায় পুলিশ প্রশাসনকে দেখা যায়নি। তবে সতর্কতা অবস্থানে দেখা গেছে সেনাবাহিনীদের।
শিক্ষার্থী রিমথি আক্তার বলেন, ‘সকাল থেকেই বাসস্ট্যান্ডে নিজ উদ্যোগে অবস্থান করি। যাতে যানজট না হয়।’
ধনবাড়ী সরকারী কলেজের ওভার স্কাউটের নাদিয়া আক্তার বর্ষা,ইশান, আজমী, তন্নী হাবিবা, হিমেল ও মাহফুজ বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে গোটা শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই। এ অবস্থায় শহরবাসীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা আমাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব বোধ থেকে সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে নেমেছি। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে না আসা পর্যন্ত এই কাজ চালিয়ে যাব।’
রিকশাচালক রাজু আহমেদ জানান, ছাত্ররা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে, দেখে খুব ভালো লাগছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে শহরের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলের সুবিধা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে শিক্ষার্থী, রোভার স্কাউট,ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট সদস্যরা। শুক্রবার সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে শিক্ষার্থী রোভার স্কাউটস, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট এর সদস্যরা পোশাক পরিধান করে এ সেবা দিয়ে চলেছে।
পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে সেবা দানকারীরা।
ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় যান চলাচলের সুবিধার্থে শিক্ষার্থী, রোভার স্কাউট, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্টের সদস্যদের ভূমিকা প্রশাংশার দাবিদার বলে জানান পথচারী শিক্ষক শাহ আলম।
সিরাজগঞ্জ জেলা রোভারের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আমিনুল ইসলাম (এলটি) তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোটা দেশ যখন স্থবির হয়ে পড়েছে সেই মুহূর্তে যানবাহন চলাচল এবং রাস্তা-ঘাটে সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে তখন থেকেই সেবা দেওয়া হচ্ছে।
কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও পলায়নের পর সিরাজগঞ্জে আত্মগোপনে চলে গেছে পুলিশ সদস্যরা। এ পরিস্থিতিতে জেলায় আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে ট্রাফিকের দায়িত্ব নিয়েছে ছাত্ররা। এমন পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জ শহরসহ কামারখন্দ উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করতে দেখা গেছে ছাত্র/ছাত্রী, রোভার-স্কাউট ও আনসার সদস্যদের। গত দুই দিন যাবৎ সকালে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জামতৈল পূর্ব ও পশ্চিম বাজার এলাকা, বাজার ভদ্রঘাট ও কড্ডার মোড় এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে এসব এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি, ভ্যান কোনো এলোমেলোভাবে ঘোরাফেরা করছে না । দায়িত্বরত শিক্ষার্থীরা এসব যানজট নিরসনে সফল হয়েছেন। তাদের এমন উদ্যোগ দেখে লোকজন প্রশংসা করেন।
কড্ডার মোড় এলাকায় ট্রাফিকের কাজ করা সাকিব নামের এক
কড্ডার মোড় এলাকার সিএনজিচালক গোলাম মিয়া বলেন, ট্রাফিক না থাকায় খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু ছাত্ররা পুলিশের অনুপস্থিতিতে তাদের চাইতে ভালো সামলাচ্ছে। এতে আমরা চালকরা খুব খশি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন সুলতানা বলেন, ছাত্ররা যেটি করছে তা পৃথীবিতে নজিরবিহীন। তাদের কর্মকাণ্ড আমি দেখেছি। তাদের এই কাজের সফলতা কামনা করছি। সেই সঙ্গে উপজেলা প্রসাশনের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে।
রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরায় সড়কে ময়লা আর্বজনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ট্রাফিক পুলিশ অনুপস্থিতিতে যানজট নিরসন করতে মাঠে নেমেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, রায়পুরা উপজেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, পৌর ছাত্রদলসহ সব অঙ্গ সংগঠন সকল নেতাকর্মীরাও অংশগ্রহণ এবং পানির বোতল বিতরণ করেন।
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি জানান, নিরবচ্ছিন্ন যানজট নিরসনে ট্রাফিক সেবা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার লেবুখালী (পাগলার মোড়) এলাকায় দিনভর এসব সেবামূলক কাজ করেন লেবুখালী ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা। এতে অংশ নিয়েছে ওই বিদ্যালয়ের স্কাউট, বিএনসিসি ও বিসিএসপিসহ শতাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরিবহনের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র চেক করেন। সড়কে ছিল না কোনো যানজট। শিক্ষার্থীদের সেবামূলক এমন কর্মকাণ্ডে প্রসংশা করেছেন সাধারণ মানুষ।
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন জগন্নাথপুর উপজেলার আনসার ভিডিপির সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার উপজেলার পৌর পয়েন্টে আনসার সদস্যদের ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। উপজেলায় দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কর্মে যোগদান না করায় সড়কের যানজট নিরসনে আনসার সদস্যরা সড়কের দায়িত্বে রয়েছেন ।
ট্রাফিকের নিয়ন্ত্রণে থাকা উপজেলা আনসার কমান্ডার রাকিবুর রহমান রাকিব বলেন, জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন তারা। তিনি আরো জানান, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সদর দপ্তরের নির্দেশনায় ট্রাফিক কন্ট্রোলে শহরের ব্যস্ততম মোড়ে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সব সময় শ্রদ্ধাশীল। জনগণের পাশে থেকে জনবাহিনী হিসেবে এ বাহিনী সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে তৃতীয় দিনের মত শহর পরিস্কার ও ট্রাফিকের ডিউটি করছেন শিক্ষার্থী, রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়ক ও বিপণীবিতানগুলোর সামনে নারী শিক্ষার্থীরা হাতে ঝাড়ু নিয়ে পরিস্কার করছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি যানজট নিরসনে কাজ করছেন তারা। সকাল থেকে শহরের প্রাণ কেন্দ্র ট্রাফিক মোড়ে মোড়ে ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে যানবাহন গুলোকে পথ দেখাচ্ছেন। চালকরাও মানছেন তাদের নির্দেশনা।
শিক্ষার্থী নাফিস ও তানজিলা জানান, সাড়া দেশে পুলিশ কর্ম বিরতি পালন করছেন। ফলে শহর গুলোর ট্রাফিকিং ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েিেছল। এই অবস্থা দূর করতে শহরের হরিশপুর, মাদ্রাসা মোড়, ছায়াবানী হল ট্রাফিক মোড় স্টেশন ও বেলঘড়িয়া বাইপাসের প্রধান সড়ক গুলোর শৃংখলা ফেরাতে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাথে স্ব উদ্যোগে কাজ করছেন রোভার স্কাউট, বিএনসিসি ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।
সমন্বয়ক আরো জানান, যতদিন ট্রাফিক পুলিশ তাদের কর্মে না ফিরবেন তত দিন পর্যন্ত তারা শহরের সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে কাজ করে যাবেন।
"