অলিয়ার মীর, দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর)
দেওয়ানগঞ্জ
ব্রহ্মপুত্রে কমছে পানি বাড়ছে ভাঙন, শঙ্কায় পাড়বাসী
বিলীন হচ্ছে ফসলিজমি বসতভিটা * ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে পাড়বাসীর * জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্রের নদের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি বসতভিটা। তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে নদের গর্ভে বিলীন হয় দ্বীন মাহমুদ, আব্দুল খালেক, বিল্লাল হোসেন, আনিছুর রহমান, আমির উদ্দিন, বিল্লাল হোসেন বিল্লু, খুদু মিয়া, রাজু মিয়াসহ কয়েক জনের বসতবাড়ি। পাশাপাশি বিলীন হয় আবাদী জমি। নিঃস্ব হয়ে পড়ে ভাঙনকবলিত মানুষ। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে এখন পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার তিন শতাধিক বসতবাড়ি, অন্তত ২০টি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, পূর্বকাজলাপাড়া আদর্শ গ্রাম নামে একটি বর্ধিত সরকারি গুচ্ছগ্রাম, পোল্যাকান্দি রহমানিয়া দাখিল মাদরাসা, পাকা মসজিদসহ শতশত বিঘা আবাদী জমি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কয়েক যুগ ধরে এ অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন দেখা গেলেও ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোনো উদ্যোগ। শুধু শুধু সান্ত¡নার বাণী শুনে আসছে তারা। কয়েকবারের ভাঙনের পরে পোল্যাকান্দি নামাপাড়াবাসী শেষ বারের মতো ঠায় নিয়েছেন গ্রামটিতে। শেষ আশ্রয়টুকু ভেঙে নিলে মাথাগোঁজার কোনো ঠায় থাকবে না তাদের। সে কারণে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, গত বছর পোল্যাকান্দি নামাপাড়া ব্রহ্মপুত্র ভাঙন রোধে ৩০০ মিটারের একটি প্রকল্প প্রস্তবনা প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে ভাঙন রোধে ইমার্জেন্সিভাবে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। তাতে ভাঙন রোধ হবে বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ। চলতি বর্ষা মৌসুমে তীব্র ভাঙন দেখা দিলে ভাঙনকবলিত ওই স্থান পরিদর্শন করেন স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদ। এলাকাবাসীদের দাবির মুখে তিনি ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন এলাকাবাসীদের। এর আগেও পরিদর্শনে যান স্থানীয় ইউএনও শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাঙনরোধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় হতাশায় ভুগছেন এলাকাবাসী।
পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার মো. আমির উদ্দিন বলেন, যুগের পর যুগ ব্রহ্মপুত্র নদ ভাঙছে। কোনো প্রতিকার নেই। কয়েক দফা ভাঙনের পর আমরা পোল্যাকান্দি নামাপাড়াবাসী এখানে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু শেষ আশ্রয়টুকুও টিকলো না। বর্ষার শুরুতেই ভেঙে নিলো। মাথাগোঁজার মতো কোনো জমি নেই আমার। ভাবছি কোথায় আশ্রয় নেব? কে দেবে আমাদের ঠাঁই? আমাদের কি শেষ রক্ষা হবে না?
ওই গ্রামের মো. সমজ উদ্দিন বলেন, ছোটবেলা থেকে দেখছি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন। আজ অব্দি ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। শেষ বারে যেখানে আশ্রয় নিয়েছি সেখানে নদী আবারও ভাঙছে। চলতি বছর বর্ষার শুরুতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বসতভিটা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমার বাড়ি পাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। রাতে ঘুম হয় না। শেষ আশ্রয় ভেঙে নিলে শেষ বারে দাঁড়াবো কোথায়?
পোল্যাকান্দি নামাপাড়াস্থ পূর্বকাজলাপাড়া গুচ্ছগ্রামের চান্দু মিয়া বলেন, আমাদের কোনো জমিজমা নেই। দীর্ঘ দিন থেকে সরকারি জমিতে (গুচ্ছগ্রামে) বসবাস করছি। দিন মজুরী করে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি এ গুচ্ছগ্রামের চল্লিশটির বেশি পরিবার। নদী ভাঙলে আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকবে না। বিগত বছর পাশেই প্রধান মন্ত্রীর উপহারের অন্তত বিশটি ঘর হয়েছে। তাদেরও বসতভিটা নেই। আমরা ত্রাণ চাইনা, বসতবাড়ি রক্ষার জন্য স্থায়ী নদী শাসন চাই।
পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার মো. আমিনুল ইসলামের ভাষ্য, পোল্যাকান্দি নামাপাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন শুধু চার থেকে পাঁচ শত মিটারেরর মধ্যে। এরই মধ্যে রয়েছে তিন শতাধিক বসতবাড়ি, অন্তত ২০টি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, পূর্বকাজলাপাড়া আদর্শ গ্রাম নামে একটি বর্ধিত সরকারি গুচ্ছগ্রাম, পোল্যাকান্দি রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, পাকা মসজিদসহ শতশত বিঘা আবাদী জমি। বর্ধিত এই গ্রামটিকে রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, আমি এর আগেও এ গ্রামে এসেছিলাম। নদী ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে আবার জানানো হবে। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদের সুনজরে আছে। আবারও বিষয়টি পাউবোকে জানানো হবে। আশা করছি, ভাঙন রোধে দ্রুত সুফল পাবেন এলাকাবাসী।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পোল্যাকান্দি নামাপাড়ার ভাঙনরত পাড় এখন পানিতে নিমজ্জিত। এই মুহূর্তে জিও ব্যাগ ফেললে কাজে আসবে না। পানি কমলে পাড় জেগে উঠলে ওই স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। আশা করছি, ভাঙন রোধে তাতেই স্থায়ী সমাধান হবে।
"