কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
কালীগঞ্জে অভিযোগ
শিক্ষকদের ভ্রমণ ভাতা আত্মসাৎ নেতা ও শিক্ষা কর্মকর্তার
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ভ্রমণ ভাতার অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসান ও শিক্ষক নেতা মাসলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। তারা ৩৭ জন প্রধান শিক্ষকের নামে ভ্রমণ ভাতার টাকা উত্তোলন করে তাদের ৯৫০ টাকা হারে ৩৫ হাজার ১৫০ টাকা প্রদান করে বাকি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অভিযোগ ভুক্তোভোগী শিক্ষকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুত কয়েকজন শিক্ষক জানান, গত অর্থবছরে উপজেলার ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী পাওয়ার যোগ্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণের ভ্রমণ ভাতার অর্থ বরাদ্দ ছিল মোট ৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২২ জন শিক্ষকের নামে অনলাইনে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৫০ টাকা এবং ম্যানুয়ালি ৩৭ জন প্রধান শিক্ষকের নামে এক লাখ ৯৪ হাজার ২৫০ টাকার ভ্রমণ ভাতার টাকা উত্তোলন করা হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান ও প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের মনোনীত ১৫০টি সরকারি প্রাথমিকের মধ্যে মাত্র ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানদের (এদের মধ্যে অধিকাংশ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) নামে ম্যানুয়ালি গোপনে ভ্রমণ ভাতার বিল প্রস্তুত করে। পরে ওইসব শিক্ষকদের নিজ নিজ হিসাব নাম্বারে পাঠানো হয়। ভ্রমণ ভাতার বিল প্রস্তুতসহ যাবতীয় কাজ শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান তার নিজ কক্ষে মিজানুর রহমানের সহায়তায় করে থাকেন বলে অভিযোগ তাদের। প্রতিজন প্রধান শিক্ষকের হিসাব নাম্বারের ৫ হাজার ২৫০ টাকা করে ৩৭ জনের মোট এক লাখ ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা আসে। পরবর্তীতে ওইসব শিক্ষকগণ স্ব স্ব হিসাব নম্বর থেকে টাকা উত্তোলন করে তা মিজানুর রহমান ও তার মনোনীত মালিয়াট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান ফিরোজ ও হুদা ডাউটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবুর আলীর নিকট জমা দেন। তারা আরো জানান, সরকারি বিধি অনুযায়ী একজন প্রধান শিক্ষকের মাসিক সমন্বয় সভার জন্য ভ্রমণ ভাতা প্রদান করা হয়। মূলত প্রধান শিক্ষকগণের আসা-যাওয়ার খরচ হিসেবে তারা ভ্রমণ ভাতা পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকগণের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের থেকে সভার স্থলে আসা জন্য কমপক্ষে ৯ কিলোমিটার দূরত্ব এবং তাদের বেসিক বেতনের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট হারে ভ্রমণ ভাতার বিল প্রস্তুত করে অফিসে জমা দিতে হয়। কিন্তু সরকারি এ নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে টিইও মাহামুদ হাসান ও প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান ৩৭ জন প্রধান শিক্ষকের নামে ভ্রমণ ভাতার টাকা উত্তোলন করে তাদের কে মাত্র ৯৫০ টাকা হারে ৩৫ হাজার ১৫০ টাকা প্রদান করে বাকি ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানায় তারা।
প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘টাকা টিইও মহদোয়ের সঙ্গে কথা বলে টাকা বন্টন করা হয়েছে।’ দুরত্ব ও বেতনস্কেল অনুসরন না করার প্রসঙ্গে এ শিক্ষক বলেন, ‘অনেক শিক্ষকের আবদার মেটাতে এমনটা করা হয়েছে।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসানের কাছে প্রধান শিক্ষকদের ভ্রমণ ভাতার বিল প্রস্তুতের কপি দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ কিশোর সাহা জানান, প্রধান শিক্ষকগণের ভ্রমণ ভাতার বিল উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তপূর্বক দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
"