তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
মেডিকেল কর্মকর্তাসহ ২৩ পদ শূন্য, ফার্মাসিস্টে চলে চিকিৎসা
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় মেডিকেল কর্মকর্তাসহ ২৩ পদ শূন্য থাকায় ফার্মাসিস্ট দিয়ে জরুরী বিভাগ ও আন্তর্বিভাগে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। এত দুর্ভোগে সেবাপ্রার্থীরা।
জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৫ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মেডিকেল কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট ও সহকারী সার্জনসহ ২৮জনের পদ বিদ্যমান। কিন্তু ২৮ জনের স্থলে মেডিকেল কর্মকর্তা আছে ৩ জন, তার মধ্যে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) পদে একজন নিয়োজিত। বর্তমানে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে।
আরো জানা যায়, এতে ২ জন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তার পাশাপাশি ফার্মাসিস্টদের দিয়ে জরুরী বিভাগ ও আন্তর্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তেঁতুলিয়ায় প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার একমাত্র জায়গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় মেডিকেল কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য মতে, হাসপাতালে বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ শতাধিক রোগী এবং জরুরী বিভাগে ৫০ থেকে ১০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। জরুরীবিভাগে আসা রোগীর মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন আন্তর্বিভাগে ভর্তি থাকেন। কিন্তু হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত না হওয়ায় ভর্তি রোগীদের বেডের সংকুলান হয় না। এতে অনেক রোগীকে বেডের অভাবে ভর্তি থেকেও বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়। এক্ষেত্রে অনেক রোগীকে মেঝেতে থাকার জন্য মেট্রেজও পায় না। ফলে অনেক মা ও শিশু রোগীর চিকিৎসা নিতে র্দুভোগ পোহাতে হয়।
তেঁতুলিয়া হাসপাতালে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক, সার্জারি চিকিৎসক না থাকায় অনেক অর্ন্তস্বত্ত্বা মাকে জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র তিরনইহাট, কালান্দিগঞ্জ ও ভজনপুরে মেডিকেল কর্মকর্তা (এমবিবিএস) নেই। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল কর্মকর্তা না থাকায় সাধারণ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গতকাল রবিবার সকালে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা তেঁতুলিয়া সদরের মমিনপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জমিলা বেগম (৬০) বলেন, ‘শরীরের ব্যথা, মাথা ঘুরছে এ জন্য ডাক্তার দেখবা আসনু। হাতও দেখিল নাই, কহিল কোনো সমস্যা নাই। এজন্য মোক ওষুধ দিল নাই।’
তেঁতুলিয়া সাহেবজোত গ্রামের আল মামুন (২৮) বলেন, শরীরে জ্বর-মাথা-ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। মেডিকেল কর্মকতা নাই। একজন দেখে ওষুধ লিখে দিল। হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে দেখি মেয়াদ উত্তীর্ণ। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্যারকে জানালে তিনি সেই ওষুধ রেখে তাকে অফিস সহকারীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে দেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ এস এম রুহুল আমিন বলেন, হাসপাতালে বেশিরভাগ মেডিকেল কর্মকর্তার পদসহ গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় জরুরী ও বহির্বিভাগে ফার্মাসিস্ট ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা দিয়ে যথাসাধ্য চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে পদায়ন চেয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে পত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বহির্বিভাগে রোগীদের মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর দায়িত্বরত ফার্মাসিস্টকে বদলি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
"