হায়দার আলী ও এম এ বাসেত, পঞ্চগড়
হরতাল-অবরোধ
কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকিঝুঁকি তেঁতুলিয়ায় নেই পর্যটক
* হরতাল-অবরোধে পর্যটক সমাগম খুব কম * অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
পর্যটন মৌসুমে রাজনৈতিক উত্তাপে হরতাল-অবরোধের প্রভাবে তেঁতুলিয়ার পর্যটনশিল্পে ধস নেমেছে। পর্যটক সমাগম না হওয়ায় হোটেল-মোটেলসহ মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ওপর চরম প্রভাব পড়েছে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো পয়েন্ট মহানন্দার তীরে দাঁড়িয়ে খালি চোখে নানা রঙের বর্ণিল রূপে দেখা যায় পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরূপ নৈসর্গিক কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতমালা। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরের আকাশে খুব কাছাকাছি দেখা মেলে বরফ-আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা। সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায় এই পর্বতমালা। কখনো স্বর্ণের আবরণ, কখনো ধূসর আকৃতিসহ নানান রূপে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্যপট আগন্তুক পর্যটকদের মন কাড়ে। সাধারণত ষড়ঋতুর দেশে কমবেশি প্রতিটি ঋতুতে কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিষ্কার আকাশে ভেসে ওঠে। তবে অক্টোবর ও নভেম্বরের খুব স্বচ্ছভাবে দেখা মেলে। আর এই দুমাস দেশি-বিদেশি বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের ভিড় জমে।
কিন্তু এ তেঁতুলিয়া স্কোয়ার আবাসিকের স্বত্বাধিকারী সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী আনিছুর রহমান বলেন, তেঁতুলিয়ায় পর্যটনশিল্পের মৌসুম হলো স্বল্পমেয়াদি। সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। কিন্তু এ বছর রাজনৈতিক উত্তাপ হরতাল-অবরোধের কারণে আশাতীত পর্যটক আসছে না। ফলে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী, পর্যটকবাহী সাধারণ যানবাহন, খাবার হোটেল ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তার মতে, রাজনৈতিক সমস্যাগুলো হরতাল-অবরোধের বাইরে অন্য কোনোভাবে সমাধান হলে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপকৃত হতেন।
বাংলা হোটেলের মালিক আজিজুল হক বলেন, অন্যবারের চেয়ে এ মৌসুমে হরতাল-অবরোধের ভয়ে পর্যটক সমাগম নেই। ফলে ব্যবসায়িকভাবে মন্দা যাচ্ছে।
তেঁতুলিয়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ নৈশকোচ কাউন্টার মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে দূরপাল্লার কোনো পর্যটক বা যাত্রী পাওয়া যায় না। যদিও সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার হরতাল-অবরোধ মুক্ত থাকে কিন্তু তুলনামুলক পর্যটক আসে না। ফলে দূরপাল্লার গাড়ির ব্যবসায় ধস নেমেছে।
তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় ট্যুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক জালাল আহামেদ বলেন, অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় এ বছর হরতাল-অবরোধে পর্যটক সমাগম খুব কম। তবে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে কিছুটা পর্যটকদের সমাগম ঘটে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ায় পৌঁছানো ডে কোচ বা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পর্যটক পরিবার নিয়ে কষ্টসাধ্য বলছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে জোর তদারকি রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে তেঁতুলিয়া পর্যটনশিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সাধারণত সপ্তাতে শুক্র ও শনিবার ছাড়া অন্যান্য দিনে পর্যটক সমাগম নেই। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর লাগাতার অবরোধ ও হরতালে এখানে পর্যটক আসতে না পারায় মৌসুমি হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা অর্থনেতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক কথায় পর্যটক না আসার কারণে এ অঞ্চলের মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনৈতিক চালিকা শক্তি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
"