মিজানুর রহমান পাটোয়ারী, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
কিশোরগঞ্জের ভৈরব
‘অবৈধভাবে’ বালু তোলায় বাধা, সংঘর্ষে আহত ৫০
* শুকনো মৌসুমে এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে বালু তোলার কথা থাকলেও বর্ষা মৌসুমেই ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন * অসময়ে বালু তোলায় জমি ভেঙে যাওয়ার প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কোদালকাঠি খালে প্রকল্প সময়ের আগেই বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে দুই পক্ষের প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে উপজেলার গোছামাড়া গ্রামে এই সংঘর্ষ হয়। এ সময় ১০টি দোকানও ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন পুলিশ।
জানা গেছে, ২ মাস আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের খনন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় কোদালকাটি খাল খননে ঠিকাদারী পান মমিনুল হক ট্রেডার্সের মালিক সেলিম মিয়া। সিডিউল অনুযায়ী শুকনো মৌসুমে বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও বর্ষাকালেই খনন শুরু করেছেন ঠিকাদার। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন শিমুলকান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া ও স্থানীয় তেল ব্যবসায়ী জয়নায় মিয়া।
এদিকে অসময়ে বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতির আশঙ্কায় বাধা দেন স্থানীয় কৃষকরা। এতে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটে। এর প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী চাষিরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ দিন আগে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী। পরে ১৬ নভেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থল গিয়ে এলজিইডির নির্দেশ অমান্য করায় ড্রেজারে পাইপ খুলে ফেলেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহযোগিতা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে গতকাল বাবুল চেয়ারম্যানের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও সাবেক ইউপি সদস্য শাহজাহান মিয়ার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে প্রায় ৫০ জনের আহত হন।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রাশেদ মিয়াকে (৬৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনজন ভর্তি ও অন্তত ১৩ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলেন জানান ডাক্তার রেজিনা পারভীন। আহত অন্যরা বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিমুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ভূইয়া রিপন বলেন, ‘রবিবার সকালে ড্রেজারের বালু উত্তোলনকারী শ্রমিক সরাফত উল্লাহকে মারধর করে শাহজাহান মিয়ার পক্ষের লোকজন। এ সময় কিছু পাইপও ভেঙে দেয় তারা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া পক্ষের লোকজন। উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।’
সাবেক ইউপি সদস্য শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘নিয়ম না মেনেই মোমিনুল হক ট্রেডার্স বালু উত্তোলন করছে। সিডিউল ট্রেন্ডার অনুযায়ী, শুকনো মৌসুমে ৭০ শতাংশ কাজ ভেকু (এক্সকাভেটর) দিয়ে ও ৩০ শতাংশ কাজ শ্রমিক দিয়ে করবেন। তা না করে, বর্ষা মৌসুমেই তারা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে দিয়েছে। এতে আমাদের অনেক জমি ক্ষতি হয়েছে। বাধা দিলে আমাদের ওপর চড়াও হয়ে আক্রমণ করছে।’
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা মেনে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু একটি মহল ড্রেজারের শ্রমিককে মারধর করে প্রায় শতাধিক পাইপ ভেঙে দিয়েছে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে এতে সংঘর্ষ বাধে।’
জানতে চাইলে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন নিয়েই দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। তবে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই বিবাদ তৈরি করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে দুই পক্ষের চারজন করে ৮ জনের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
"