আরিফ খান, বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা)
পাবনার বেড়া
পরচুলার টুপি করে স্বাবলম্বী আড়াই শতাধিক নারী
* একজন মাসে ৮ থেকে ১০টি টুপি তৈরি করে প্রকারভেদে মজুরি পান ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা * ঢাকা থেকে আনা উপকরণে তৈরি পরচুলার টুপি আবার ঢাকায় পাঠানো হয়
পরচুলার টুপি (ইউগ ক্যাপ) তৈরি করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন পাবনা বেড়া উপজেলার আড়াই শতাধিক নারী। এতে জড়িত বেশির ভাগ নারীই গৃহহীন ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। এ কাজে তাদের নিজেদের আয় বৃদ্ধিসহ পরিবারেও এসেছে সচ্ছলতা। উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা রাকশা, চকপাড়া, পুরান ভারেঙ্গা, কাশিনাথপুর গ্রামের চারটি বাড়িতে পরচুলা টুপি বানানোর কারখানায় কাজ করেন তারা।
ভারেঙ্গার রাকসা গ্রামের সোহেল রানা ও চকপাড়ার রহিমা খাতুনের পরচুলার টুপির কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, দুটি ঘরে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াসহ স্থানীয় শতাধিক নারী পরচুলা তৈরিতে ব্যস্ত। পরচুলা তৈরি করে প্রতি মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় করছেন তারা। প্রতিটি টেবিলে স্ত্রু দিয়ে আটকানো আছে মাথার প্লাস্টিকের ডামি। এই মাথার ওপর রয়েছে জাল (নেট)। এর ফাঁকে সুঁচের ফোড়ে খুব মনোযোগ দিয়ে আটকানো হচ্ছে একেকটি চুল। সূক্ষ্মভাবে চুল আটকানো সম্ভব হলেই টুপি তৈরি হয়।
সোহেলের কারখানার কারিগর সোহানা খাতুন বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে আমি এ কাজ করি। সোহেল ভাই কারখানা দেওয়ার পর এখান থেকে এ কাজ শিখে কাজ করছি। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা কামাই করা যায়।’
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রেশমা আক্তার বলেন, ‘দুই বছর আগে আমার বান্ধবী বীথি আক্তারের সঙ্গে এখানে কয়েকদিন শিখে কাজ শুরু করি। পড়ালেখার পাশাপাশি রহিমা আপার কারখানায় কাজ করি। অর্থ উপার্জন করে পড়াশোনার খরচ সহ পরিবারকে সহায়তা করা যায়।’
কারখানায় কাজ করা কয়েকজন জানান, পরচুলার একটি টুপি বানাতে সময় লাগে প্রায় দুই থেকে তিন দিন। একজন মাসে ৮ থেকে ১০টি টুপি বানানো যায়। এতে প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়।
রাকসা গ্রামের কারখানা মালিক সোহেল রানা জানান, তার স্ত্রী সিমা আগে ঢাকায় একটি কারখানায় কাজ করত। তার সঙ্গে পরামর্শ করে তিন বছর আগে এ কারখানা স্থাপন করা হয়। টুপি তৈরির এসব উপকরণ ঢাকা থেকে আনা হয়। পরচুলা তৈরি করে আবার ঢাকায় পাঠানো হয়। আমার এখানে প্রায় ১০০ নারী শ্রমিক কাজ করেন।
জানতে চাইলে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোরশেদুল ইসলাম জানান, ‘আমি শুনেছি এলাকার স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাসহ নারীরা পরচুলার টুপি তৈরির কাজ করছেন। এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নেব।’
"