ওয়ালীউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
তীরে স্তূপ, ভরাট নদী স্বাস্থ্য-পরিবেশে ঝুঁকি
পলিথিনের ব্যবহার : পলিথিন মোড়ানো গরম খাবারে ক্যানসার ও চর্মরোগের সংক্রমণের ঝুঁকি * ভেস্তে যাচ্ছে পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ * বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় পলিথিন ব্যবহারের পথেই হাঁটতে হচ্ছে বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের
দেড় যুগ আগে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে অবাধে। ব্যবহৃত এসব পলিথিনের শেষ ঠিকানা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন নদী, খাল বিলে। শহর ঘেঁষে বয়ে চলা মহানন্দার তীরে জমেছে পলিথিনের স্তূপ। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা নদীর পরিবেশ দূষণসহ ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিষিদ্ধ হলেও কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকান, ফলের দোকান, কসমেটিকসের দোকানসহ জেলার সব বাজারেই চলছে প্রকাশ্যে পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার। এতে বাধা দেওয়া বা তদারকির কেউ নেই। সহজলভ্য হওয়ায় পলিথিনের প্যাকেটগুলো যত্রতত্র ফেলেন বাসিন্দারা। এতে সেচযোগ্য পয়েন্ট পলিথিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩টি নদী ও দশটিরও বেশি বড় বড় খাল রয়েছে। এসব নদী-খালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিতসহ ভরাট হয়েছে মহানন্দা নদী। ডাস্টবিনে না ফেলে বাড়ির উঠানে থাকা ড্রেনেই ময়লা-আর্বজনা ফেলেন মানুষজন। এর ফলে ড্রেনের পানিসহ পলিথিনের পরিত্যক্ত অংশ মহানন্দা নদীতে গিয়ে পড়ে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও বৃথা থেকে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ ও রহনপুর পৌরসভা প্রশাসন ময়লা-আবর্জনা দুইভাগে বিভক্ত করেছে। একটি পচনশীল, অন্যটি অপচনশীল আর্বজনা। দুভাগে বিভক্তি করা এসব আর্বজনা দুটি রঙের ডাস্টবিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু তদারকির অভাবে এমন উদ্যোগও ভেস্তে যেতে বসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী চক্র কাজ করছে। ঢাকাসহ দূরবর্তী কয়েকটি জেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিন আসে। সাধারণত এসব পলিথিন মালবাহী ট্রেন, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আনা হয়। বাজারজাতের মাধ্যমে দোকানদার হয়ে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি পলিথিন নষ্ট করছে পরিবেশ।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দোকানি বলেন, এক কেজি পলিথিন ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়, কখনও ১০-২০ টাকা কম-বেশি হয়। এক কেজিতে ২০০ থেকে ২৫০ পলিথিন থাকে। কিন্তু একই টাকায় যদি ঠোঙা কেনেন, তাতে ৭০-৮০টি থাকে। তাই পলিথিনে লাভ বেশি তাদের।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও পরিবেশবাদীদের মতে, পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থাকে। এতে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়, উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করে। এছাড়া পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে।
জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, নিষিদ্ধ পলিথিন বাজারজাত বন্ধ করতে প্রতি মাসেই অভিযান চালানো হয়।
ক্ষতিকারক এ পণ্যটি ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে মানুষের ধারণা থাকলেও, শুধু সদিচ্ছার অভাব আছে। জেলার বাজারগুলোয় অভিযান চালাতে গিয়ে পলিথিন বিক্রিতাদের নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। পলিথিন বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের প্রশ্ন, নিষিদ্ধ এ পণ্যের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের এ পথেই হাঁটতে হচ্ছে।
"