দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ১৭ নভেম্বর, ২০২৩

মেহেরপুরে জেলা পরিষদের জায়গায় ফের দলীয় কার্যালয়

মেহেরপুরে দুবার বন্ধ করে দেওয়ার পরও জেলা পরিষদের জায়গা দখল করে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। এবার স্থায়ীভাবে পাকা ভবন নির্মাণ করছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় জেলা পরিষদ এবার আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে ।

এর আগে পুলিশ নিয়ে দুবার নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় জেলা পরিষদ। সম্প্রতি সেখানে আবার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। সরকারি জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয় নির্মাণে অনুমতি লাগে না বলে দাবি উদ্যোক্তাদের।

জেলার সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের বাড়িবাকা গ্রামে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আগে গ্রামের মানুষকে মাদকমুক্ত রাখা ও বই পড়তে উৎসাহিত করতে ২০০০ সালে জেলা পরিষদের জায়গায় একটি পাঠাগার গড়ে তুলেছিলেন বাড়িবাকা গ্রামের কিছু উৎসাহী যুবক। তিন বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাঠাগার ভেঙে বুড়িপোতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় তৈরি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, প্রায় ২৩ বছর আগে সদর উপজেলার বাড়িবাকা গ্রামের উৎসাহী যুবকদের গড়ে তোলা পাঠাগারে সংবাদপত্র ও বই পড়ার জন্য বিকেল হলেই জড়ো হতেন গ্রামের শিক্ষিত বিভিন্ন বয়সী লোকজন। আর্থিক সংকটে পাঠাগারটি ২০২০ সালের দিকে বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয় ‘স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র’ পাঠাগারের জায়গা দখল করে মক্তব গড়তে গেলে বাধা দেয় গ্রামবাসী। পরে তাদের অভিযোগে ভিত্তিতে মক্তবের কাজ বন্ধ করে জেলা পরিষদ। সম্প্রতি সেখানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর ছবিসম্বলিত একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দলীয় কার্যালয় ভবন নির্মাণ করছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। মেহেরপুরের সংসদ সদস্য (এমপি) ওই ঘর নির্মাণে দুইবান (৭২ ফুটে একবান হিসেবে) এবং উপজেলা পরিষদ থেকে আরেকবান টিন দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করছেন নির্মাণকারীরা।

সোমবার বাড়িবাকা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের পিচঢালা রাস্তার পাশে স্থায়ী পাকা ভবন নির্মাণকাজ চলছে। ওই জায়গার মালিক মেহেরপুর জেলা পরিষদ। সেখানে একটি খুঁটিতে লাগানো সাইনবোর্ডে বুড়িপোতা ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ আছে।

গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক সেনাসদস্য মোখলেসুর রহমান মুকুল বলেন, ‘টিনের ঘর ভেঙে এখন পাকা ঘর করা হচ্ছে, জায়গাটি খাস বা জেলা পরিষদের কি না, সেটা আমরা অবগত না। তবে কোনো মহলের বাধায় ঘরের কাজ বন্ধ হলে বা ভেঙে দিলেও জায়গাটি পড়ে থাকবে না। কিছুদিনের মধ্যে কেউ না কেউ ঠিকই দখল করে নেবে।’

দলীয় কার্যালয় ভবন নির্মাণের আগে জেলা পরিষদ অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে জানান বুড়িপোতা ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাজাহান। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রামে একটি স্কুল ভবন উদ্বোধন করতে এরে আমরা এখানে আওয়ামী লীগ কার্যালয় নির্মাণের অনুরোধ জানাই। তিনি মৌখিক সম্মতি দিয়ে দুইবান ঢেউটিন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তারপরই দলীয় কার্যালয় নির্মাণ শুরু হয়েছে।’

পাঠাগার ভেঙে দলীয় কার্যালয় তৈরির উদ্যোক্তা রেজা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অফিস তৈরি করার জন্য জেলা পরিষদের কোনো অনুমতির দরকার নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে, সরকারি জায়গায় সরকারি দলের অফিস হচ্ছে। এমপি আমাদের ঘর করার জন্য দুইবান ঢেউটিন দিতে লিখিত আদেশ দিয়েছেন।’

জানতে চাইলে মেহেরপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহা. আব্দুস সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে মূলত জামাতের অফিস তৈরি করা হচ্ছে। আমি পুলিশ নিয়ে দুইবার কাজ বন্ধ করে দিয়ে আসার পরেও কিছু নেতার ইন্ধনে কাজ চলছে। পরিষদের সিদ্ধান্তে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close