চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের চিলমারী ব্রহ্মপুত্র
নদে চর জেগে ছোট খালে, চলাচল ব্যাহত
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নাব্যতা হারিয়ে ছোট খালে পরিণত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। অধিকাংশ লোকজনই পায়ে হেঁটে এ নদের চর পাড়ি দিচ্ছেন। চর জাগায় বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক পরিবারের মাছধরা ও নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মাঝিদের রোজগার। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদ। বর্ষায় চরাঞ্চলের এসব গ্রাম থাকছে বন্যাসহ নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে।
জানা গেছে, পরিবর্তন হচ্ছে না কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার উন্নয়ন। দ্রুত নদী খনন সহ বন্দরের কাজ করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে ঢিলেঢালা। বর্তমানে চিলমারী উপজেলার নৌবন্দর ঘেঁষে প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র নদটি নাব্যতা হারিয়েছে। অধিকাংশ লোকজনই পায়ে হেঁটে ব্রহ্মপুত্র নদের চর পাড়ি দিচ্ছে। অষ্টমির চর, নয়ারহাট, করাই বরিশাল, চর সহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন এবার ব্রহ্মপুত্র নদে ইরি-বোরো চাষের প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। নদে চর জেগে উঠায় বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক পরিবারের মাছধরা ও নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ। বিশাল নদটিতে চর জেগে পরিণত হয়ে ছোট্ট একটি খালে।
এ অঞ্চলের জনগনের অভিযোগ, ২০১৬ সালে ৭ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিলমারীতে আগমন করেন। খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি উদ্বোধন কালে তিনি জানান চিলমারী নদী বন্দর কে একটি পূর্নাঙ্গ রুপ দেওয়া হবে। কিন্তু বছরের পর বছর গেলেও কোনো কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে না বলে অভিযোগ এ অঞ্চলের মানুষের। এছাড়া তারা মনে করেন নদী খনন করে গভীরতা বাড়ালেই চাষাবাদ করতে সেচ ব্যবহার করতে হবে না। এতে চাষাবাদে খরচ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নৌকার মাঝি এন্তা বলেন, ‘শুকনো নদী, অনেক দূর ঘুরে যাইতে হয় তাই সময় ও তেল খরচ বেশি পরে। নৌকায় পারাপারের যাত্রী দিন দিন কমে যাচ্ছে। ইঞ্জিন চালিত প্রায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।’
নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ারখাতা এলাকার কৃষক মাহফুজার রহমান বলেন, ‘নদী ভাঙ্গনে আমাদের অনেক জমাজমি ভেঙে গেছে। যেটুকু আবাদি জমি অবশিষ্ট আছে সেগুলো ইতোমধ্যে চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে নদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সেচ ব্যবহার করতে হবে।’
চিলমারী গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহ অধ্যাপক মামুন অর রশ্মিদ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নদীর উপরও পড়ছে। তাই গ্রীষ্ম মৌসুমে শুকিয়ে যাচ্ছে আর বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও নদী ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করা না হলে উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়ন ও পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের অনেক গ্রাম বর্ষায় বন্যায় কবলিত হওয়ার শংকা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের সংস্কার না হলে বর্ষা মৌসুমে হুমকির শিকার হবে উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর নাব্যতা হারিয়ে বেকার হয়ে যাবে নৌকার মাঝির প্রায় দুই হাজার পরিবার।
বিআইডব্লিউটিএ প্রধান পাইলট মাহবুবুর রহমান জানান, এ সময় গুলোতে একটু নাব্যতা সংকট হবে। তবে ফেরি চলাচলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় একটি চ্যানেল ঠিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। নৌকা গুলা ভিন্ন পথে না গিয়ে ফেরির জন্য ড্রেজিং করা নির্দিষ্ট পথে চললে নাব্যতা সংকটের সম্মুখীন হতে হবে না। তাছাড়া নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যহত আছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
"