জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী
নোয়াখালী
গণপূর্তের জমি দখল করে হাসপাতাল-দোকানপাট
পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন * কাগজপত্র যাচাই করে দখলদার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে কমিটি
নোয়াখালীতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের শতকোটি টাকার সম্পত্তি দখল হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মাইজদী হাসপাতাল রোডের মধুসূদনপুরে সাড়ে ৫ একর সরকারি জায়গায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল। এছাড়া শহরের অন্তত আরো কয়েকশ একর জায়গায় ঘেরাও দিয়ে মাটি ফেলে চলছে দখলের হরিলুট।
গণপূর্ত কার্যালয় সূত্র জানায়, সেন্ট্রাল হাসপাতালের পশ্চিম দিক থেকে রাস্তা বাদ দিয়ে উত্তর পাশে ৪০ ফুট প্রশস্তের জায়গার মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর। এখানে সাড়ে ৫ একরের মধ্যে কোথাও কোনো জায়গা লিজ বা হস্তান্তর করা হয়নি। তবু ওইসব দাগের মালিকদের থেকে পেছনের অংশ খরিদ করে অনেকে সামনের অংশে গণপূর্তের জায়গা দখল করে বসে আছেন।
মুন হাসপাতাল ভবনের মালিক ডা. সাজেদুল আলম সাজু খরিদসূত্রে ৪ শতাংশ ভূমির মালিক। নকশা অনুযায়ী তার জমি পেছনে হলেও তিনি রাস্তার পাশে গণপূর্তের জমিতে ‘মুন হাসপাতাল’ নামে পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছেন। তার পাশে একই দাগে ডা. বি.এল নাগ ও পাশের দাগে প্রাইম হাসপাতাল নামে আরো একটি বিল্ডিংয়ের খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া ডক্টর ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সসহ আরো শতাধিক দোকানঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন প্রভাবশালীরা।
ডক্টর ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স ভবনের মালিক শাহীন উদ্দিন বলেন, আমি ২০০৩ সালে ৮ শতাংশ জমি খরিদ করে বিল্ডিং করি। গণপূর্তের জমি হলে তো আমাকে নোটিশ পাঠাতো। গত ২০ বছরে কেউ আমাকে বিষয়টি জানায়নি।
নোয়াখালী প্রাইভেট হসপিটাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিঠু বলেন, গণপূর্তের মূল্যবান জমিটি পরিত্যক্ত থাকায় স্থানীয় লোকজন দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে আসছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় দখলের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুন হাসপাতাল ভবনের মালিক সাজেদুল আলম বলেন, আমার বিল্ডিংয়ের পিলারের বাইরে সামান্য অংশ গণপূর্তের জমিতে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে সেটি ভেঙে দিতে পারি। তারা মেপে লাল দাগ দিয়ে গেছে। বাকিটা নকশা দেখলে বোঝা যাবে।
ডা. বি. এল নাগ বলেন, আমরা যাদের থেকে জমি কিনেছি তাদের সঙ্গে যোগযোগ করুন।
প্রাইম হাসপাতালের মালিক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালের সামনে এক শতাংশ সরকারি জায়গা রয়েছে। এছাড়া শহরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সংলগ্ন মাঠ, নোয়াখালী সুপার মাকের্টের পেছনের অংশ ও পৌর বাজারের সামনের সড়কের খাল দখলসহ কয়েক স্থানে রাস্তার পাশে গণপূর্তের খালি জায়গায় বালু ফেলে ও বাঁশ দিয়ে ঘিরে জমি দখলের মহোৎসব চলছে। এজন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে এলাকাবাসী। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নোয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব বলেন, জনবল কম থাকায় ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করা যায় না। অচিরেই গণপূর্তের খাসজমি উদ্ধারে হাসপাতাল রোডসহ সব জায়গায় অভিযান চালানো হবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক (ডিসি) দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
"