রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
শেষ সময়েও ইলিশের দেখা নেই, নিষেধাজ্ঞায় শঙ্কা
পটুয়াখারীর রাঙ্গাবালীতে মৌসুমের শেষ সময়েও সগর ও সংলগ্ন নদীতে আশানারূপ ইলিশ ধরা পড়ছে না। এর মধ্যে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ফলে ইলিশ না পাওয়ার হতাশার মধ্যে নিষেধাজ্ঞার আতঙ্কে দিন পার করছেন উপকূলীয় এলাকার জেলেরা।
উপজেলার জাহাজমারা স্লুইসগেট ঘাটে দেখা গেছে, নোঙর করে আছে প্রায় অর্ধশত ট্রলার। বঙ্গোপসাগর ছাড়াও আগুণমুখা, পায়রা, দারছিড়া, বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ইলিশ ঘিরেই জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। সাগরে কমবেশি ইলিশ ধরা পড়লেও নদীতে মাছ না পাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন এই এলাকার জেলেরা।
জেলেরা বলছেন, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কিন্তু চলতি বছর সাগরে তেমন কোনো মাছ পাননি তারা। ফলে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কীভাবে কাটাবেন, তা তারা জানেন না।
জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু হয় ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিনে ইলিশের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। ইতিমধ্যে নদীতে বেড়েছে পানি, মাঝে মাঝে হচ্ছে বৃষ্টি, পড়ছে প্রচুর গরম, তবুও দেখা নেই ইলিশের। সাগরে ইলিশ পাওয়া গেলেও সংলগ্ন নদীতে মাছের হাহাকার।
অন্য বছর এই সময়ে বাজারে প্রচুর ইলিশ পাওয়া গেলেও এবার ভিন্ন চিত্র। ফলে হতাশ মাছের আড়তের মালিকরাও। সারা দিনে দুই এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে এলেও তেমন হইচই নেই। প্রায় নিরব আছে রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ, রাঙ্গাবালীর কোড়ালিয়া ও মৌডুবীর জাহাজমারা সস্লুইস ঘাট। উপজেলার হাটবাজারগুলোতে যে টুকু কেনাবেচা, তার নিরবেই হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৪৭ জন নিবন্ধিতসহ প্রায় ২০ হাজার জেলে আছেন। সাগরে ইলিশ না পড়ায় তীরে গিয়ে অলস সময় পার করছেন জেলেরা। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকে।
একাধিক জেলে জানান, জলবায়ু পরির্বতন ও প্রাকৃতিক নানা কারণে এ বছর মাছের ভরা মৌসুমে সাগরে সতর্কতা সংকেত থাকায় মাছ ধরতে যেতে পারেনি তারা। এ কারণে চলতি বছর ইলিশ শিকার করতে পারেননি তারা। ফলে প্রায় ৭০ শতাংশ জেলে দেনায় জর্জরিত। বিভিন্ন এনজিও ও মহাজনের দাদনের চাপে আছেন তারা।
জেলে জাফর সরদার বলেন, ‘একটি ইলিশের ট্রলার নামাইতে (নদীতে পাঠাতে হলে) অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। এনজিওর থেকে সাপ্তাহিক লোন, ধারদেনা আর মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাল সারাই করে সাগরে যাই। কিন্তু ইলিশের দেখা নেই। কীভাবে দেনা দেবো আল্লাহ ভালো জানে।’
মৎস্য আড়ৎদার মো. নুর জামাল মুন্সী বলেন, ‘আমরা প্রায় কোটি টাকার মতো জেলেদের দাদন দিয়েছি। এ বছর ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। কারণ এ বছর উপকূলীয় অঞ্চলে ইলিশের দেখা মেলেনি।’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারি অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশ মাছের মৌসুম পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভরা মৌসুমেও ইলিশ ধরা পড়ছে না। বিষয়টি চিন্তার হলেও একদমই মাছ ধরা পড়ছে না তা নয়।
রাঙ্গাবালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলী আহম্মেদ আকন্দ বলেন, চলতি বছরে দেড়িতে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ইলিশ মাছের তেমন দেখা মেলেনি। বৃষ্টির হলে মাছের দেখা মিলবে। তবে ভোলাসহ উপকূলীয় কিছু জায়গায় ইলিশ দেখা যাচ্ছে। দেড়িতে হলেও মাছ আরো পাওয়া যাবে আশা করি।
"