লালমনিরহাট প্রতিনিধি

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বুড়িমারী বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ ৬ দিন

শ্রমিক-সর্দার দ্বন্দ্ব : রবিবার বিকেলে বৈঠক করেও সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি। * সরাসরি লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার বা প্রতিনিধির মাধ্যমে মজুরি পরিশোধের দাবি শ্রমিকদের। * স্থলবন্দরের শেড, মাঠ ও সড়ক জুড়ে পণ্যবাহী কয়েকশ গাড়ি আটকে আছে।

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিকদের দুই পক্ষের অন্তঃদ্বন্দ্বে ছয় দিন ধরে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রপ্তানি। এতে স্থলবন্দরের শেড, মাঠ ও সড়ক জুড়ে পণ্যবাহী কয়েকশ গাড়ি আটকে আছে। স্থবিরতা দেখা দিয়েছে রাজস্ব আদায়ে। তবে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি রবিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেও সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশের পথে মহাসড়কের একাধিক স্থানে পণ্য বোঝাই-খালাসের শ্রমিকেরা সারা দিন ধরে দলে দলে বসে আছেন। শ্রমিকদের একটি পক্ষের দাবি, মজুরির টাকা সরদারদের মাধ্যমে দিলে নিবে না। সরাসরি লেবার হ্যান্ডেলিং ঠিকাদার বা প্রতিনিধির মাধ্যমে পরিশোধের দাবি তাদের।

সরদার পক্ষের বিরুদ্ধে সঠিক মজুরি না দেওয়া, কেটে নেওয়া টাকার হিসাব না দেওয়া, নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিক সংগঠনের কমিটি গঠন না করে স্বজনপ্রীতিসহ বৈষম্যের অভিযোগ করেছে শ্রমিকেরা। এর প্রতিবাদে আগেও শ্রমিক সরদারদের বিচার ও পদত্যাগের দাবিতে একাধিকবার পণ্য বোঝাই-খালাস বন্ধ রেখে মহাসড়ক অবরোধ ও ধর্মঘট করে শ্রমিকরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করা ও সাধারণ শ্রমিকদের কাজের সিরিয়াল দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ও সরদার পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল মারে। এতে ১৫ জন আহত হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলামকে প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শ্রমিকেরা।

এদিকে শ্রমিক অসন্তোষ ও স্থলবন্দরের কার্যক্রমে ব্যাঘাতের ঘটনায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহের অনুমোদনে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) ফরহাদ ইমরুল কায়েস, পাটগ্রাম ইউএনও নুরুল ইসলাম, পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ, বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) গিয়াস উদ্দিন।

কমিটি রবিবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সাধারণ শ্রমিকদের ১০ জনের প্রতিনিধি দল ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদকে নিয়ে বৈঠক করেন। শ্রমিকদের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগ বুড়িমারী স্থলবন্দর শাখার সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সূত্রে জানা গেছে, সমস্যা নিরসনে সরদারপক্ষ, ঠিকাদার ও শ্রমিকপক্ষের মাধ্যমে পণ্য বোঝাই-খালাস, মজুরি পরিশোধের কাজ করার প্রস্তাব করা হলেও শ্রমিকেরা রাজি হয়নি। তবে বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন সূত্র।

পাটগ্রাম ইউএনও নুরুল ইসলাম বলেন, ‘গঠিত কমিটি ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদেরকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। পণ্যবাহী গাড়ি বোঝাই-খালাস কাজ করতে শ্রমিকদেরকে রাজি করাতে আমরা চেষ্টা করছি।’

জানতে চাইলে বুড়িমারী স্থলবন্দর পুলিশ অভিবাসন চৌকির (ইমিগ্রেশন) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুর হাসান কবির বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে আমদানি রফতানি কার্যক্রমে স্থবিরতা থাকলেও যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। চিকিৎসা, ভ্রমণ সহ বিভিন্ন কাজে সাধারণ যাত্রীদের পারাপারে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close