গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

আট মাস ধরে ল্যাবে পড়ে আছে যন্ত্র, ভোগান্তি

জনবল সংকট : * ব্লাড কালচার, যক্ষ্মা কালচার, এনজিও গ্রাম (কফ ল্যাব) ও বায়োপসি পরীক্ষার যন্ত্র থাকলেও জনবলের অভাবে চালু হচ্ছে না সেবা * স্বল্প খরচে জরুরি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা * অব্যবহারে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার উপক্রম কোটি টাকার যন্ত্রপাতি * দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির

সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লাড কালচার যন্ত্রটি পড়ে আছে প্যাথলজি বিভাগে। যন্ত্রটি দিয়ে রক্তে থাকা জীবাণু শনাক্ত ও তার চিকিৎসার ওষুধ নির্ধারণ করা যায়। একইভাবে যক্ষ্মা রোগের ধরন নির্ণয় ও তার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের নির্ধারণের যক্ষ্মা কালচার যন্ত্রসহ এনজিওগ্রাম (কফ ল্যাব) ও বায়োপসি করার যন্ত্র।

রোগনির্ণয়ের যন্ত্র থাকার পরও প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও জনবলের অভাবে প্রায় আট মাস ধরে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে না। এতে একদিকে স্বল্প খরচে এই সব পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেবা প্রার্থীরা, অপরদিকে অব্যবহারে পড়ে থেকে নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সব ধরনের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, ইউএসজি, ইসিজি, ইকো, ইটিটি, চোখের ল্যাসিক সংযোজন সুবিধাসহ ডেন্টাল ইউনিট চালু করা হয়েছে। ল্যাপারোস্কপি অপারেশনের সুবিধাসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার ব্যবস্থা রয়েছে। শিশু, গাইনী, অর্থপেডিক, ইএনটি মেডিসিন বিভাগ চালু করা হয়েছে। রয়েছে সিসিইউ সুবিধা।

কিন্তু ব্লাড কালচার যন্ত্র, যক্ষ্মা কালচার যন্ত্র, এনজিও গ্রাম (কফ ল্যাব) ও বায়োপসি পরীক্ষা করার মতো অতিপ্রয়োজনীয় যন্ত্র হাসপাতালে থাকলেও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে এসব সেবা চালু করা যাচ্ছে না।

শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে তৎকালিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের প্রচেষ্টায় ১০০ বিঘা জমির ওপর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় হাসপাতালটি। জেলা সদরের এক কিলোমিটার পশ্চিমে শিয়ালকোল এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চিকিৎসা নেয়।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. কৃষ্ণ কুমার পাল বলেন, ব্লাড কালচার যন্ত্র, যক্ষ্মা কালচার যন্ত্র, এনজিও গ্রাম (কফ ল্যাব) ও বায়োপসির মতো অতিপ্রয়োজনীয় যন্ত্র প্রায় আট মাস আগে হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না।

বন্ধ যন্ত্র সম্পর্কে হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস মুহা. খায়রুল আতাতুর্ক বলেন, এ সব যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলেও প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ না থাকায় হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রোগের পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

এ সব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতাল ব্যস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার কাছে। তিনি বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে চিকিৎসা খাতে। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অতিপ্রয়োজনীয় মূল্যবান যন্ত্রপাতি জনবলের অভাবে পড়ে রয়েছে, বিষয়টি আমাকে সেভাবে জানানো হয়নি। এখন দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মোহাম্মাদ নাসিমের ছেলে জেলার কাজিপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়। তিনি বলেন, সরকার আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা মানুষের দৌড়গড়ায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় তৎকালিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিমের প্রচেষ্টায় সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে সর্বাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে মূল্যবান যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। সাধারন মানুষ অতিগুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবে এটা আসলে মেনে নেয়া যায় না। বিষয়টির অতিদ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close