রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ২৮ মে, ২০২৩

কুড়িগ্রামের রৌমারী

ফসলি জমিতে ইটভাটা

* অভিযোগ গ্রহণের প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়েনি * প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলেও প্রতিকার পাননি

আইনের তোয়াক্কা না করে বিজিবি ক্যাম্প, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ার অভিযোগ উঠেছে সফিয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এস ব্রিকস (এসবি) নামে এই ইটভাটাটির অবস্থান কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ার চর (শালুরমোড়) এলাকায়। ফসলী জমির মাটি কেটে ভাটায় ইট বানানো শেষে এখন এসব ইট বিক্রি হচ্ছে। ফলে জমির ফসল উৎপাদন হ্রাস পরিবেশ দূষন, রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধিসহ নানা বিষয় উল্লেখ করে সালমান কায়সার নামের এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু অভিযোগ গ্রহণের প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়েনি।

এর আগে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক এবং ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পায়নি। এতে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও নিকটবর্তী গ্রামে বসবাসকারী লোকজন ভাটার ধুলা ও ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। সর্দি, কাশি ও ফুসফুসজনতি রোগের প্রবণতা বেড়ে গেছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন অনুযায়ী এমন স্পর্শকাতর এলাকায় ইটভাটা করার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই। তারপরও ভাটা করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর-শালুরমোড় নামক এলাকায় এস ব্রিকস (এসবি) নামে ইটভাটা চালু রয়েছে। সেখানে মাটি দ্বারা বানানো পোড়া ইট মুজদ রয়েছে। তিন ফসলী জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ভাটায়। এসব মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে।

ইট ভাটাটি হতে কয়েকটি গ্রামের দুরুত্ব একশত মিটারও কম।

এছাড়াও কাউনিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগয়টাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, দাঁতভাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্পসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজার ইটভাটা হতে গড়ে তিনশত থেকে চারশত মিটার দুরুত্বে অবস্থিত।

ইটভাটা সংলগ্ন জায়গায় ২০ মিটারের কম দুরুত্বে কাউনিয়ারচরগ্রাম জামে মসজিদ অবস্থিত।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ইটভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে আমাদের স্কুলে দিকে কালো ধোঁয়া চলে আসে। এতে আমরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছি। তাই দ্রুত সরকারের কাছে আকুল আবেদন ইটভাটাটি বন্ধ করা হোক।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলেন, ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কারণে ফসলের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে ধান, পাট, গম, ভুট্রাসহ মৌসুমী ফলফলাদি নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণ বলেন, ইটভাটার কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণ।

দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম রেজাউল করিম বলেন, নিয়ম ভেঙ্গে ইটভাটাটি গড়ার ফলে ফসল ও মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই স্থানীয় প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে ইটভাটাটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসব্রিকস (এসবি) ইটভাটা মালিক মো. সফিয়ার রহমান বলেন, আমি নিয়মনীতি মেনে ইটভাটা গড়ে তুলেছি। পরিবেশ অধিদফতর গত বছরের ৮ আগস্ট তারিখে ইটভাটা চালুর জন্য ছাড়পত্র প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীরা ও জনসাধারণ অসুস্থ্য হলে কি করার আছে। ইট যদি না থাকত তাহলে স্কুল পাকা পাকা তলায় তলায় ভবন হতো না। যদি কর্মকর্তা বন্ধ করতে বলে তাহলে বন্ধ করা হবে।

কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন ও অভিযোগ সম্পর্কে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মো. রেজাউল করিম মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইটভাটার অভিযোগ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের আলোকে তদন্ত করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close