সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
নকল প্রসাধনীর অবাধ বাণিজ্য, ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য

নীলফামারীল সৈয়দপুরে নকল প্রসাধনীর ব্যবসা জমে উঠেছে। সব বয়সীদের পছন্দের শীর্ষে এসব প্রসাধনী অবাধে কেনাবেচা হচ্ছে। এতে প্রতারিত হয়ে আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছেন গ্রাহকেরা। পাশাপাশি শিশু ও উঠতি প্রজন্ম জটিল চর্মরোগে আক্রান্তসহ ঝুঁকিতে রয়েছেন জনস্বাস্থ্য।
সৈয়দপুর শহরের চুরিপট্টির এলাকার কতিপয় প্রসাধনী ব্যবসায়ী ঢাকার চকবাজর ও অন্যন্য এলাকা থেকে নকল প্রসাধনী আনছে। এরপর প্রসাধনীগুলো দিনাজপুর, পার্বতীপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, হাতিবান্ধাসহ উত্তরের সকল জেলার বিলাসবহুল বিপনী বিতান ও মফস্বলের পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি করা হয়েছ। এতে গোটা উত্তরাঞ্চলের হাট-বাজার সয়লাব হয়েছ।
আমদানি করা প্রসাধনীর প্যাকেট বা মোড়কে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম, অনুমোদন, বিএসটিআই এর লোগো, ব্যাচ নং, এমআরপি, এমএফজি, ট্যাক্স অ্যান্ড ভ্যাট, মেয়াদ, তারিখ উল্লেখ থাকে। ফলে দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটি আসল, আবার কোনটি নকল। আর এ সব নকল প্রসাধনীর বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে এ শহরে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, চুরিপট্টির এলাকার বাজারের অন্তত ২৫ জন পাইকারী বিক্রেতা এ সব নকল প্রসাধনী বিক্রি করছেন। বিশ্বের নামকরা কোম্পানির মোড়কে মেইড ইন জার্মানির জায়গায় মেইড অ্যাস জার্মানি স্টিকার লাগিয়ে, কখনো ইউনিলিভার কোম্পানির ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির আদলে ফেজার অ্যান্ড লাভলি, ফুয়ার অ্যান্ড লাভলি ইত্যাদি নামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আছে ক্রিম, শেভিং ফোম, ফেইস ওয়াশ, আফটার সেইভ লোশন, জনসন বেবি লোশন, জনসন তেল, জনসন ক্রীমসহ এই কোম্পানির শিশুদের সব ধরনের প্রসাধনী।
এগুলো বিভিন্ন পার্লার, সেলুন ও হেয়ার ড্রেসিং এর দোকানগুলোতে বেশি ব্যবহার হয়েছ। বিএসটিআই কিংবা সংশ্লিষ্টরা অভিযান পরিচালনা না করায় প্রতিনিয়ত সাধারন মানুষ প্রতারিত হয়েছ। আর্থিক ক্ষতিসহ পাশাপাশি শরীরে চর্মরোগের ঝুঁকিও বাড়ছে তাদের।
এদিকে বছরে দুই একটি অভিযান পরিচালনা করেন জেলা ভোক্তা অধিদপ্তর। সেখানে শুধু জরিমানা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর শহরের শহীদ ডা. শামমসুল হক সড়কের ৩টি প্রসাধনীর দোকানে অভিযান চালানো হয়। এতে অনুমোদনহীন আমদানিকৃত ও নকল প্রসাধনী বিক্রির দায়ে ৩ জনকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরেও নকল প্রসাধন বিক্রেতাদের ব্যবসা থেমে নেই।
ফারজানা ইয়াসমিন নামে এক বিউটিশিয়ান জানান, তার পার্লারে অনেকেই মুখে কালো দাগ, র্যাশ, গোটা, এলার্জি সমস্যা নিয়ে আসে। তাদের কাছে এ সব সমস্যার জানতে চাইলে তারা বলেন, ক্রিম, লোশন ব্যবহারে এমন হয়েছে। পরে তাদেরকে আমরা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, নকল প্রসাধনী ত্বকের উজ্জলতা নষ্ট করে। এতে এলার্জি, ডারমাটাইসিস, ক্ষত, চামড়া কালো, একজিমাসহ স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অধিক কেমিক্যালে নকল প্রসাধনী তৈরি করা হয়।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, এ সংক্রান্ত তথ্য জানতে লোক লাগানো হয়েছে। প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নীলফামারীর সহকারী পরিচালক মো. শামসুল আলম বলেন, আমরা গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে তদন্তের পর অভিযানে যাব।
"