মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

  ২৭ মে, ২০২৩

মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

১৯ শয্যার ভবনেই পঞ্চাশের সেবা, জনবল সংকট

* কয়েক বছর আগে ৩১ শয্যার ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় * ৩০ চিকিৎসক পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৯ জন * পরিত্যক্ত ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে জরুরি বিভাগের কার্যক্রম

নেত্রকোনার মদনে ১৯ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স ভবনেই চলছে ৫০ শয্যার সেবা। এ কারণে রোগীদের ওয়ার্ডে ও বারান্দায় থেকে সেবা নিতে হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার থাকলেও নেই অস্ত্রোপচার (সিজারিয়ান) ব্যবস্থা। এতে ঝুঁকি নিয়েই নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে যাচ্ছেন হাওরপাড়ের প্রসূতি মায়েরা।

জানা গেছে, মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি ভবন রয়েছে। একটি ৩১ শয্যা ও অপরটি ১৯ শয্যাবিশিষ্ট ভবন। তবে ৩-৪ বছর আগে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ভবন অপসারণ না করায় ওই স্থলে নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে না। ফলে ১৯ শয্যাবিশিষ্ট ভবনেই চলছে ৫০ শয্যার সেবা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট দ্বিতল ভবনে কার্যক্রম শুরু হয় মদন উপজেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। পরে ২০১১ সালে তিনতলা বিশিষ্ট আরো একটি ভবন নির্মিত করে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়।

এদিকে মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ চিকিৎসক পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৯ জন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন কনসালটেন্টের বিপরীতে আছেন ২ জন। তাদের মধ্যে অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট আতাউর রহমান অ্যাটাচম্যান্টে অন্য জায়গায় কর্মরত আছেন। টেকনোলজিস্ট ৬টি পদে বিপরীতে আছেন ২ জন। স্টোর কিপার পদটিও রয়েছে শূন্য। পরিসংখ্যান পদটি একজন স্বাস্থ্যসহকারী দিয়ে চালানো হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ডেন্টাল চেয়ার মেরামত করা জন্য ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তা মেরামত করা হয়নি।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, মদন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যার ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনেই জরুরী বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে সেখানে সংস্কার করা হলেও তা ঠিক কাজে আসবে না মনে করছেন সেবাগ্রহীতারা। ১৯ শয্যার ভবনে চলছে চিকিৎসাসেবা।

ধুবাওলা গ্রামের আব্দুল মতিন (৬০) বলেন, পেটের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সকালে একবার ডাক্তার আসলেও সারাদিন ডাক্তারের দেখা মিলে না। প্রয়োজন হলে নার্সদের ডাকাডাকি করলেও আসে না, আবার আসলেও রোগীদের সাথে খারাপ আচরন করেন। নিয়মিত পরিস্কার না করায় দূর্গন্ধের কারণে থাকতে খুব কষ্ট হয়, ঘুমও হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভর্তি রোগী বলেন, তারা দরিদ্র পরিবারের মানুষ। নেত্রকোনা বা ময়মনসিংহ গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না। কিন্তু এখানে ডাক্তারা নিয়মিত খোঁজখবর নেন না। অধিকাংশ ওঘুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বাইরে করতে হয়। খাবারও খুব খারাপ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. নূরুল হুদা বলেন, আমি যোগদান করার পর ইসিজি মেশিন সচল ও স্থায়ী ঠিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করেছি। ভবন অপসারন ও নতুন ভবন নির্মাণের জন্য অধিদপ্তরে চিঠি প্রেরণ করেছি। ডেন্টাল চেয়ার মেরামতের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।

নেত্রকোনা সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিঞা জানান, সম্প্রতি কয়েকজন ডাক্তার বদলি হওয়ায় শঙ্কট দেখা দিয়েছে। এটা কোনো স্থায়ী সমস্যা না। অচিরেই ডাক্তার পোস্টিং দেওয়া হবে। পরিত্যাক্ত ভবন অপসারনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে সিজারিয়ান ব্যবস্থা সম্ভব হচ্ছে না।

নিম্মমানের খাবারের ব্যাপারে তিনি বলেন, মামলা জটিলতার কারণে টেন্ডার হচ্ছে না। তবে খাবার ভাল মানের করার জন্য আমি কথা বলব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close