আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী)

  ০১ এপ্রিল, ২০২৩

হুমকির মুখে বিএমডিএ’র সেচ প্রকল্প

রাজশাহীর তানোরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক শ্রেণীর কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। এতে কৃষিবান্ধব প্রতিষ্ঠানের ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এলাকার হাজার হাজার কৃষকের কপালে।

কৃষকদের অভিযোগ, আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অবৈধ মোটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব মোটরে সেচ বাণিজ্য করায় বিএমডির অধিকাংশ গভীর নলকূপ ভূ-গর্ভস্থ পানির লেয়ার ফেল করায় অকেজো হয়ে পড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৩০টি গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। একটি গভীর নলকূপ যে পানি উত্তোলন করে তার প্রায় ৯০ ভাগ সেচ কাজে ব্যবহার ও ১০ ভাগ অপচয় হয়। অথচ একটি মোটরে যে পানি উত্তোলন হয় তার মাত্র ২০ ভাগ সেচ কাজে ব্যবহার ও প্রায় ৮০ ভাগ অপচয় হয়। ফলে অবৈধ মোটরে উত্তোলন করা পানির বিপুল পরিমাণ অপচয় হওয়ায় গভীর নলকূপগুলো ভূ-গর্ভস্থ পানির লেয়ার ফেল করছে।

জানা গেছে, উপজেলায় বিএমডিএর ৫৩৬টি ও ব্যক্তি মালিকানা ১৬টিসহ ৫৫২টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এছাড়াও অগভীর নলকূপ বিদ্যুৎ চালিত ৪১১টি ও ডিজেল চালিত ৫০টি, এলএলপি বিদ্যুৎ চালিত তিনটি, ডিজেল চালিত ৩৫০টিসহ এক হাজার ৩৬৬টি সেচ পাম্প রয়েছে। উপজেলায় আবাদযোগ্য কৃষিজমি রয়েছে ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। এর মধ্যে সেচের আওতায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর। সেচ বহির্ভূত জমি রয়েছে এক হাজার ৬৬২ হেক্টর। এক ফসলি জমি ৩৪৪ হেক্টর, দুই ফসলি চার হাজার ৫৪০ হেক্টর, তিন ফসলি ১৯ হাজার ১০৯ হেক্টর।

অন্যদিকে তানোরে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছে ৫২ হাজার ৪০৮ জন। এর মধ্যে আবাসিক ৪৩ হাজার ৯৭৫ জন, বাণিজ্যিক দুই হাজার ৭২৩টি, শিল্প ৫২০টি, সেচ ৮৭৮টি ও দাতব্য ৯৫৮টি এবং বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ২৫ মেগাওয়াট। দেড় হর্স পাওয়ার মোটর থেকে বাড়ি সংলগ্ন জমিতে স্বল্প পরিসরে সেচ দেওয়া যাবে, তবে তা হতে হবে গভীর নলকূপ স্কিমের বাইরে। গভীর নলকূপ স্কিমের মধ্যে ও বাসাবাড়িতে অবৈধভাবে তিন থেকে চার হর্সপাওয়ার মোটর স্থাপন করা হয়েছে। আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পল্লী বিদ্যুৎ এসব অবৈধ মোটরে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এসব অবৈধ মোটরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করতে না পারলে, আগামীতে এ অঞ্চলে সেচ তো দূরের কথা মানুষকে খাবার পানি কিনে পান করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে বিএমডিএ তানোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহাফুজুর রহমান বলেন, গভীর নলকূপের কমান্ড এরিয়ায় সেচ মোটর স্থাপনের কোনো সুযোগ নেই। আর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। এমনকি আবাসিক সংযোগ থেকেও সেচ দেওয়া যাবে না।

তবে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোর এরিয়া ম্যানেজার (এজিএম) জহুরুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আবাসিক মোটর থেকে কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া যাবে না সত্য, তবে অনেকে দিচ্ছেন। বিএমডিএর গভীর নলকূপ সেচ দিতে পারছে না, তাই আমরা মোটরে সংযোগ দিয়ে কৃষি উৎপাদনে ভূমিকা রাখছি, যখন পানির সংকট হবে তখন দেখা যাবে। এতো আগেই ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে হা হুতাশ করার প্রয়োজন আছে বলে আমি করি না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close