কামাল হোসেন ও আমিনুল ইসলাম, রাজবাড়ী

  ৩১ মার্চ, ২০২৩

দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌপথ

নাব্যসংকটে পদ্মা নদী

* অসংখ্য ডুবোচর, পানি কমে ব্যাহত জাহাজ চলাচল * দৌলতদিয়ায় আটকে আছে ১০টি কোস্টার জাহাজ

পণ্য পরিবহনে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাবনার নগরবাড়ী-সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। সেখানে নির্ধারিত ড্রাফটের বিভিন্ন পণ্যবাহী শত শত কোস্টার জাহাজ নিয়মিত চলাচল করে। কিন্তু নদীর পানি কমে নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি চ্যানেলে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় সেখানে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা থেকে ছেড়ে আসা নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরগামী বিভিন্ন সার, গম, কয়লা ও ক্লিংটার বোঝাই ১০টি কোস্টার জাহাজ গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পদ্মা নদীতে আটকা পড়ে আছে।

বুধবার (২৯ মার্চ) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ছয় নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদীতে নোঙর করে আছে এমভি দেশ ভ্রমণ, এমভি আব্দুল কাদের, এমভি শেখ সুরজাত আলী, এমভি ল্যাবস, এমভি গোলাপ-১, রশিদ শিপিং লাইন, এমভি এসটিএস-১, এমভি মোর্শেদা বেগম, এমভি গোলাপ-১, এমভি ঝর্ণাসহ ১০টি কোস্টার জাহাজ। শতাধিক শ্রমিক ওই জাহাজগুলো থেকে মালামাল নামিয়ে বাল্কহেডে বোঝাই করে পণ্য খালাস করে গন্তব্যে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছে।

জাহাজ থেকে মালামাল নামানোর কাজে কর্মরত শ্রমিকরা বলেন, নদীতে নব্য সংকট ও ডুবোচরের কারণে কোস্টার জাহাজগুলো সরাসরি নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী যেতে পারছে না। তাই জাহাজগুলো এখানে এসে আটকে পড়ছে। এখান থেকে মালামাল আনলোড করে আমরা সেগুলো বাল্কহেডে তুলে দিচ্ছি। এতে মালিকপক্ষকে ভাড়া ও শ্রমিক খরচ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে।

আটকে পড়া জাহাজ এমভি দেশ ভ্রমণের চালক (মাস্টার) মো. ইমরুল শেখ জানান, চট্টগ্রম বন্দর থেকে ইউরিয়া সার নিয়ে তিনি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী যাচ্ছিলেন। পথে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটের কাছাকাছি এসে অন্যান্য জাহাজের সঙ্গে তার জাহাজটিও আটকা পড়ে। জাহাজ চলাচলে দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌপথ চ্যানেল সচল রাখতে সেখানে দ্রুত খনন কাজ করা খুব জরুরী।

আরেক জাহাজের চালক (মাস্টার) আব্দুল আলীম বলেন, নদীর মাঝে বড় বড় ডুবোচর জেগেছে। ওইসব ডুবোচরে জাহাজ আটকে যাচ্ছে। ডুবোচরের কারণে নদী পথে ঘুরে আসতে জ্বালানী খরচ ও সময় বেশি লাগছে। তারপর আবার ঘাটে এসে নদীর পারে জাহাজ চাপাতে পারছি না। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে নদীতে জাহাজ আটকে যাওয়ার কারণে এখানেই বাল্কহেডে করে মালামাল খালাস করতে হচ্ছে। নদীতে নাব্য সংকটের কারণে বেশিরভাগ জাহাজ দাসকান্দি ঘাটে চলে যাচ্ছে।

জাহাজের চালক (মাস্টার) রশিদ সরদার বলেন, চট্টগ্রাম থেকে দৌলতদিয়ায় আসতে নদীতে পানি থাকলে সময় লাগতো দুই থেকে তিন দিন। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নাব্য সংকটে সময় লাগছে ছয় থেকে সাত দিন। আবার ঘাটে এসে মালামাল খালাসের জন্য থাকতে হয় দুই থেকে তিন দিন। জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করে তারপর ছেড়ে যাব বাঘাবাড়ী বন্দরে।

ফেরির চালকদের (মাস্টার) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ড্রেজিংয়ে একটি চ্যানেল সচল আছে। ওই চ্যানেলটি শুধুমাত্র দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যাওয়ার সময় ব্যবহার করা হচ্ছে। আর পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া যাওয়ার সময় স্বাভাবিক নদীপথই ব্যবহার করা হয়। তবে নদীতে অসংখ্য ডুবোচর থাকলেও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আপাতত কোনো ঝুঁকি নেই।

এ ব্যাপারে আরিচা নদী বন্দরের সহকারী পরিচালক এস এম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, এখন শুকনো মৌসুম যে কারণে দৌলতদিয়া-পাবনার নগরবাড়ী-সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌপথের চ্যানেল ঠিক রাখতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নদীতে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা নেই। তবে রাত্রীকালীন বিশ্রাম এবং আমাদের নৌ-বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ না করে অতিরিক্ত পণ্য বহন করার কারণে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসে কিছু পণ্যবাহী জাহাজ আটকে থাকতে হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close