অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ২৯ মার্চ, ২০২৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ছে কিশোর অপরাধ

রাজনৈতিক ছত্রছায়ার অভিযোগ নিষ্ক্রিয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। শহরের অলিগলিতে তারা দাপট চালিয়ে যাচ্ছে ফ্রি-স্টাইলে। হামলা-ভাঙচুর, চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ করে চলেছে তারা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছে না স্থানীয়রা। অন্যদিকে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও নেই তেমন।

রবিবার রাতে শহরের নিমতলা মোড়ে অতর্কিত ককটেল বিস্ফোরণের পর আলোচনায় উঠে আসে কিশোর অপরাধী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে ৮-৯ জন কিশোর দলবেঁধে এসে পরপর পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ করে। তাদের ছোঁড়া আরও তিনটি ককটেল অবিস্ফোরিত থেকে যায়। পরে পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। যারা ককটেল ছুঁড়ে মারে তাদের বয়স ১২-১৬ বছরের মধ্যে। স্থানীয়ভাবে তারা বখাটে হিসেবেই পরিচিত।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার পর অনুসন্ধানে জানা যায়, কাঁঠালবাগিচা, নিমতলা মোড়, আরামবাগ, বালুবাগান, মসজিদপাড়া, পেয়ারাবাগান, উদয় সংঘের মোড়, রেহাইচর এলাকাজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অন্তত ডজনখানেক কিশোর অপরাধী দল। প্রতিটি দলে সদস্য সংখ্যা চার থেকে ১৫ জন পর্যন্ত। উদয়ন মোড়, আলীনগর এলাকায় রয়েছে আরো চার থেকে পাঁচটি দল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কিশোর অপরাধ চক্রের বেশিরভাগ সদস্যই মাদকাসক্ত। গাঁজা থেকে শুরু করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সেবনে অভ্যস্ত তারা। মাদকের টাকা জোগাতে তারা জড়িয়ে পড়ছে চুরি বা ছিনতাইয়ে। অনেকে ভাড়াটে মাস্তান হিসেবেও কাজ করে। চক্রের সদস্যরা দল বেঁধে শহরের বাইরে গিয়েও চুরি-ছিনতাই করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে এসব চক্রের সদস্যের কাছে রয়েছে বিপুল পরিমাণ ধারালো অস্ত্র ও ককটেল। কেউ কেউ প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করে। ককটেল এবং আগ্নেয়াস্ত্র তারা সংগ্রহ করে ‘বড় ভাইদের’ কাছ থেকে। বড় কোনো ঝামেলাই পড়লে বড় ভাইয়েরাই তাদের উদ্ধার করেন।

সম্প্রতি প্রফেসরপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন বাড়ির মালিকের কাছে চাঁদা চাইতে যায় কয়েকজন কিশোর। ওই বাড়ির মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী কিশোরদের বয়স ১৩-১৪ বছরের বেশি নয়। অথচ তাদের কথাবার্তা পুরোই সন্ত্রাসীদের মতো।

শহরজুড়ে কিশোর অপরাধীদের উৎপাতও চোখে পড়ে স্থানীয়দের। কোচিং বা প্রাইভেট সেন্টারগুলোর সামনে প্রকাশ্যেই তারা মেয়েদের ইভটিজিং করে। কাঁঠালবাগিচা, সোনালী ব্যাংকের সামনের সড়ক, হরিমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়কে মেয়েদের নিয়মিত উত্ত্যক্ত করে তারা। দূর থেকে অশালীন কথা বলার পাশাপাশি সুযোগ বুঝে গায়ে হাত দেওয়া, চুল বা ওড়না ধরে টান দেওয়ার ঘটনাও ঘটায় তারা।

১৫ মার্চ লিডস কোচিং থেকে বেরিয়ে নিমতলা যাওয়ার সময় বিটিটিবি অফিসের সামনে শ্লøীলতাহানির শিকার হন নবাবগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, একটি মোডিফাইড বাইক (বিকট শব্দ হয় এমন মোটরসাইকেল) নিয়ে তিন কিশোর পেছন দিক থেকে যাওয়ার সময় তার ওড়না ধরে টান দেয়। সামলাতে না পেরে তিনি সেখানে পড়ে যান। তার এ অবস্থা দেখে হাসিতে ফেটে পড়ে ওই কিশোররা। ওই ছাত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, এমন দৃশ্য ওই এলাকায় নিত্যদিনের। কিশোর গ্যাঙের ভয়ে হেঁটে চলাচল করতে পারেন না তারা। বাধ্য হয়ে অটোরিকশায় চলাচল করেন। ওই ছাত্রীর বাবাও বিষয়টি জানতেন। তিনি জানান, মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি ঘটনা চুপচাপ মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, বিকাল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত কাঁঠালবাগিচা, গাবতলা মোড়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এলাকা, কলেজ গেটে প্রকাশ্যে দাপট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিশোর অপরাধী চক্রের সদস্যরা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা দেখেন না তারা।

সদর মডেল থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত রাতে ককটেল বিস্ফোরণের সঙ্গে কিশোররা জড়িত এমন তথ্য তারা পেয়েছেন। তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। দুটি পাড়ার ছেলেদের মধ্যে বিরোধের জের ধরেই ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

শহরজুড়ে কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম সম্পর্কে ওসি বলেন, এদের কিশোর অপরাধী বলা যাবে না। এদের কর্মকাণ্ড শুধু নিজ পাড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তারপরও আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থানায় যোগদানের পর বেশ কিছু তৎপরতার কারণে অপরাধীরা গুটিয়ে গেছে। সহজলভ্যতার কারণেই কিশোরদের হাতে চলে যাচ্ছে ককটেলের মতো বিস্ফোরক। এটি উদ্বেগজনক। তবে পুলিশ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্রিয় রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close