মমতাজুর রহমান, আদমদীঘি (বগুড়া)

  ২৬ মার্চ, ২০২৩

বীর নিবাস নির্মাণে ধীরগতি

দুই মাসেও শুরু হয়নি অধিকাংশ ঘরের কাজ

বগুড়ার আদমদীঘিতে বীর নিবাস নির্মাণে ধীর গতির কারণে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রশাসনের তাগিদে জরুরি ভিত্তিতে জায়গা ছেড়ে দিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে এখনো নিজের ঘরে ফিরতে পারছেন না তারা।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতিতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারে। তবে ঠিকাদার বলছেন, প্রশাসন থেকে পাওনা না দেওয়ায় কাজের গতি কমেছে।

জানা গেছে, সরকারের ‘বীর নিবাস’ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করার জন্য ৩২ জন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে তাগাদা দেয় উপজেলার প্রশাসন। ফলে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা তাদের জরাজীর্ণ বাড়ি ভেঙ্গে বীর নিবাসের জায়গা করে দেন। পরে তাদের কেউ টিনের বেড়া দিয়ে, কেউ অন্যের বাড়িতে পরিবার নিয়ে সাময়িকভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের দ্বিতীয় পর্যায়ে আদমদীঘিতে ৩২ জন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ‘বীর নিবাস’ বরাদ্দ দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ট বীর নির্বাস নির্মাণের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। দরপত্রের মাধ্যমে মেসার্স সুমা এন্টার প্রাইজ ১৬টি ও স্বপ্নীল ইঞ্জিনিয়ার ট্রেডার্স ১৬টি এসব গৃহ নির্মাণের ঠিকাদারি পায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের প্রায় আড়াই মাস (৭০ দিন) পেরিয়ে গেলেও মাত্র ১৩টি বীর নিবাসের ভিত্তি স্থাপন ও কিছু বীর নিবাসে ইট-বালু দিয়ে গাথুনি দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অধিকাংশ বীর নিবাস নির্মাণে কোনো কাজ করা হয়নি।

এদিকে যেসব বীর নিবাসের কাজ শুরু হয়েছে, তাও চলছে ধীর গতিতে। নির্মাণকাজ শুরুর আগেই পানির জন্য সাবমারসিবল পাম্প বসানোর নির্দেশ থাকলেও, তা কোনো বীর নিবাসেই বসানো হয়নি। ফলে পানির অভাবে ইট-বালুর গাঁথুনির কাজ দুর্বল হচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, পুরোনো বসতবাড়ি ভেঙ্গে মাথা গোঁজার জন্য অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। চৈত্র-বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টি ও পরে বর্ষায় দুর্ভোগ বেড়ে যাবে। জারুরিভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে কর্তৃপক্ষকে বলেও সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছাত্তার ও সাদেক আলী বলেন, মাটির ঘর ভেঙ্গে পরিবার নিয়ে টিনের বেড়ার ঘরে কষ্ট করে বসবাস করছেন। তাদের বীর নিবাস নির্মাণে কিছুটা অগ্রগতি হলেও কিছুদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে আছেন।

মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী বলেন, তার বাড়ি নির্মাণে শুধু ভিত করে ফেলে রাখা হয়েছে। কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।

মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বলেন, কাজ শুরুর আগেই পানি সরবরাহের জন্য সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন না করায় ইট বালুর গাথুনি শক্ত হচ্ছে না। এ ছাড়া ঠিকাদারের ধীর গতির কাজের কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন তিনি।

মেসার্স সুমা এন্টার প্রাইজের ঠিকাদার রানা আহম্মেদ বলেন, ‘বীর নিবাস নির্মাণের বিল না পাওয়ায় কাজের গতি কমেছে।’

উপজেলা উপসহকারি প্রকৌশলী রশিদুল ইসলাম বলেন, কিছু দিনের মধ্যে ঠিকাদার বিল পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, দ্রুত বীর নিবাস নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টুকটুক তালুকদার বলেন, বীর নিবাস নির্মাণে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঠিকাদারদের কাজের বিল দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষক মন্ত্রণালকে অবগতি করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত বিল দেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close