বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রাণিসম্পদের জমি দখলের অভিযোগ
নওগাঁর বদলগাছীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জমি দখল করে স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে কোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলামের (স্বপন) বিরুদ্ধে।
ভান্ডারপুর কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্রের জমি দখল ও স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং এলাকাবাসী।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভান্ডারপুর উপকেন্দ্রের জমিটি উপজেলার নালুহার মৌজার ১২৩ নম্বর খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। সেই খতিয়ানে ৩৫৬ নম্বর দাগে ১১ শতাংশ, ৩৫৮ দাগে ২২ শতাংশ, ৩৫৯ দাগে ২০ শতাংশ, ৩৬১ দাগে ১০ শতাংশ, ৩৬৩ দাগে ১৭ শতাংশসহ ৮০ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মধ্যে পুকুরও অন্তর্ভুক্ত আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওইসব জমির মধ্যে থেকে পুকুরের পশ্চিম পাড়সহ প্রায় ৩০ ফুট বাই ৯০ ফুট জমিতে পিলার পুঁতে দখল করে নিয়েছে কোলা ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপন। জায়গাটি ভরাট করা হচ্ছে রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, শাহিনুর স্বপন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জমি থেকে এর আগে কিছু জায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এবারও তিনি দখল করছেন। স্বপন ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। তিনি তার ইচ্ছা মতো কাজ করছেন। তার ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, খবর পেয়ে তিনি গত ১২ মার্চ দুপুরে একটি দল নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পান। সে দিনই ওই জমিতে রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিনের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের অনুলিপি তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠান।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, অধিদপ্তরের জায়গা দখলের ঘটনা গত ১৫ মার্চ আইনশৃঙ্খলা সভায় তুলে ধরেন। সেখানে ইউএনও জায়গা দখলের ঘটনা কিছু করার অপারগতা প্রকাশ করেন, মামলা করার পরামর্শ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতায় ভান্ডারপুর কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্রের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থ জমি অবৈধভাবে দখল করে গত বছরের ২১ জুন থেকে রাস্তা নির্মাণ শুরু করেন ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর।
কোলা ইউনিয়ন এআই টেকনিশিয়ান মুনজির মোমশাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাস্তা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার জন্য ওই তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিনের কাছে অভিযোগ করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. নাজমুল হক। অনুলিপি প্রেরণ করেন পরিচালক, রাজশাহী বিভাগ, রাজশাহী ও জেলা প্রশাসক নওগাঁ, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার এবং চেয়ারম্যান কোলাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে। এরপরও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন কোনো ব্যবস্থা না গ্রহণ করায় চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপন হয়ে উঠেন বেপরোয়া এবং পুনরায় রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিনা অনুমতিতে পিলার পুঁতে অবৈধভাবে জমি দখল করে।
বিষয়গুলো নিয়ে কোলা ইউপির চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. নাজমুল হক অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কিনা বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিষয়টি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দেখছেন। আর আমি একটা অনুষ্ঠানে আছি আপনার কিছু বলার থাকলে সাক্ষাতে কথা বলুন।
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মহির উদ্দীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাকে অবহিত করা হয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়ে আমি ১৯ মার্চ জেলার মাসিক সভায় অলোচনা করেছি। এর আগেও জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কাজটি বন্ধের জন্য আমার উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল, কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
"