রাজু আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম

  ১৯ মার্চ, ২০২৩

কুড়িগ্রামে সাংবাদিক রিগ্যানকে নির্যাতন

তিন বছরেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে নির্যাতনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি। উল্টো অভিযুক্তদের পদোন্নতিসহ চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। গত তিন বছরে আদালতে মামলার কেস ডায়েরি উপস্থাপন হয়েছে। পুলিশের পর তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু আদালতে প্রতিবেদন জমা পড়েনি।

তিন বছরেও নিজের ওপর হওয়া নির্যাতন ও অন্যায়ের বিচার না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন নির্যাতিত সাংবাদিক আরিফ। তিনি বলেন, ‘আসামিরা ক্ষমতাশালী। তাদের প্রত্যেককে এরই মধ্যে পদায়ন করা হয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে মামলাকে প্রভাবিত করে তদন্ত বাধাগ্রস্ত করছে। সরকারও সাংবাদিক নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচারে আন্তরিক নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাইকোর্টে রিট করার পর আদালত রুল জারি করলেও তা উপেক্ষা করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যেককে পদায়ন করা হয়েছে। তাদের পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে। সরকার ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আদালতকে পাশ কাটিয়ে এসব করেছে। এটা দুঃখজনক। আইন-আদালতের প্রতি এমন অবজ্ঞা সরকারি অসাধু কর্মচারীদের অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত করবে। নির্যাতনের শিকার হওয়া আমি প্রথম সংবাদকর্মী নই। সুষ্ঠু বিচার না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকবে। তাই ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করি। যাতে দেশে আর কোনো সংবাদকর্মীকে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে না হয়।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই রংপুরের পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত মামলা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত কাজ করছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।’

মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার তিন বছর হলেও পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার এক বছর হচ্ছে। বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের জন্য আগের তদন্ত কর্মকর্তার নেওয়া সাক্ষ্য প্রমাণ আমরা যাচাই করছি। সমস্ত সাক্ষীদের ডেকে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। যেহেতু মামলাটি হাইকোর্টের নির্দেশনার ভিত্তিতে হয়েছে, সে নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনের চেষ্টা করছি। এটি যাতে একটি ক্রেডিবল তদন্ত হয় সেটি মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো।’ তবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো সময় জানাননি পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা। এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআই এসপি বলেন, ‘তদন্তে কোনো চাপ নেই। আমাদের বাধা বা চাপ দিয়ে কোনো লাভ নেই, আমরা সেরকম কিছু মোকাবিলা করছি না।’

আরিফুলের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে আমরা গণমাধ্যম মারফত জানতে পেরেছি। পুলিশ প্রবিধানমালা ১৯৪৩ এর ২৬১ প্রবিধান অনুসারে বিরতিহীনভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালালে সবচেয়ে জটিল মামলার তদন্ত শেষ করতেও ১৫ দিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। আমরা প্রত্যাশা করি আইনের শাসনের স্বার্থে মামলাটির তদন্ত কাজ শেষ করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নামে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের কারণে ২০২০ সালের ১৪ মার্চ প্রথম প্রহরে ঘুমন্ত আরিফুল ইসলামের বাসার ঘরের দরজা ভেঙে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় স্ত্রী-সন্তানের কাছ থেকে। তাকে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখিয়ে জেলা শহরের ধরলা সেতুর পূর্ব পাড়ে নেওয়া হয়। পরে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেন ওই সময়ের আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম ও মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাসহ জেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা। আরিফের বাড়িতে কোনো তল্লাশি না চালালেও তার কাছ থেকে আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে মোবাইল কোর্টের নামে সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মধ্যরাতে বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে সাজা দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close