রবিউল আলম ইভান, কুষ্টিয়া

  ১৮ মার্চ, ২০২৩

আসামিপক্ষের শতাধিক বাড়ি তছনছ, লুটের অভিযোগ

কুমারখালীতে রাজ্জাক হত্যাকাণ্ড : প্রতিপক্ষের হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে ছিল শতাধিক পরিবার * পরিবারের লোকদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয় * পুলিশের পাহারা সত্ত্বেও গ্রামের ফাঁকাবাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট * হত্যার ঘটনায় একটি, ভাঙচুরের ঘটনায় মোট ৫টি মামলা

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি হত্যাকাণ্ড কেন্দ্র করে বাড়ি ছাড়ার পর আসামি পক্ষের লোকজনের শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলা ও গ্রেপ্তারের আতঙ্কে বাড়ি ছাড়ার এক মাস পর ফিরে মাথা গুজার অবস্থা নেই অনেকের। উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

এদিকে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে আসামীপক্ষের লোকজন থানায় চারটি ও আদালতে একটিসহ মোট পাঁচটি মামলা করেছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রামের পুলিশ পাহারা থাকার পরও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। লুটে নেওয়া হয়েছে সব কিছু। বাদ যায়নি গোয়ালের গরু থেকে শুরু করে ঘরের ইট পর্যন্ত। এমনকি কেটে নেওয়া হয়েছে ক্ষেতের ফসল।

আসামীপক্ষের লোকদের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকেই তাঁদের গ্রামে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা ছিল। এ মধ্যেই বাদীপক্ষ ও তৃতীয়পক্ষের লোকজন তাঁদের ঘরবাড়িতে ভাঙচুর করেছেন। গোয়ালের পশু থেকে দেয়ালের ইট পর্যন্ত লুট হয়েছে। এখন অতর্কিত হামলার শঙ্কায় দিন কাঁটছে তাদের।

তবে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার বাদী পক্ষের লোকজন।

চর জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মকবুল বিশ্বাস (৭৫) বলেন, ‘মাসখানেক আগেও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু এক মাস পরে ফিরে দেখি আমার সব শেষ, তছনছ হয়ে গেছে। আধাপাকা ঘরগুলো ভেঙে মাটিতে পরে আছে। কোনো মালামাল নেই। ভাঙা ঘরের চালের টিনও নেই। টয়লেট ভাঙা। পানি খাওয়ার কলও লুট করে নিছে ওরা।’

মকবুল বিশ্বাসের বড় ছেলে সবুজ ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি। তবে তাঁর মতো গ্রাম ছেড়ে ছিলেন আসামিপক্ষের শতাধিক পরিবার। তাঁদের অধিকাংশ ঘরবাড়িতেই ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গত সপ্তাহের শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে পরিবারগুলো গ্রামে ফিরেছেন। ভাঙা ঘরবাড়িতে পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে তাবু টাঙিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা। তাঁদের টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থাও নেই।

সম্প্রতি চর জগন্নাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে আসামীপক্ষের শতাধিক পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা ঘরবাড়িতে ভাঙচুরের করা হয়েছে। তার চিহ্ন এখনো স্পষ্ট। আসবাব, গবাদিপশুসহ কোনো মালামাল নেই। কয়েকটি পরিবার এখনো তাঁবু টাঙিয়ে রয়েছে। কেউ কেউ পাটখড়ি বা ছাপড়া তুলে মাথা গুঁজার ঠাই করেছেন। অন্য এলাকার স্বজনরা তাদের খাবার ও পানির যোগান দিচ্ছেন।

গ্রামের ঠিকাদারী ব্যবসায়ি জিয়াউর রহমান বলেন, ঘটনার দিন পেশাগত কারণে ঢাকায় ছিলেন। তবু তাকে আসামি করা হয়েছে। ওই দিনই তাঁর পরিবারের সদস্যদের গ্রামছাড়া করেছেন আসামীপক্ষের লোকজন। পরে তাঁর পাকা একতলা বিল্ডিং ভাঙা হয়েছে। বাড়ির মালামাল, গরু ও মাঠের ফসল লুট করা হয়েছে।

জানা গেছে, সুদের পাওনা টাকা আদায় নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২ ফেব্রুয়ারি সকালে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সজিব বিশ্বাস ওরফে সবুজের (৩৫) সঙ্গে সাবেক সদস্য জাবেদ আলী বিশ্বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে সাবেক সদস্য আহত ও তার ভাতিজা পল্লী চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক নিহত হন। ঘটনার দিন রাতেই রাজ্জাকের বড় ভাই মো. আক্কাস আলী বিশ্বাস বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এতে ওয়ার্ডের বর্তমান সদস্য সবুজকে প্রধান আসামী করে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার প্রধান আসামী সবুজের ভাই সরুজ বিশ্বাস বলেন, ‘কাশেম মেম্বর, মামলা বাদী ও বাদীপক্ষের সমর্থকরা তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দিছে, লুটপাট করেছে। তবে তারা আর মারামারি, ভাঙচুর, লুটপাট চান না।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবুল কাশেম বলেন, তিনি বা তাঁর লোকজন এসব কাজে জড়িত নয়। হত্যার মামলাকে দুর্বল করতেই তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।

মামলার বাদী ও রাজ্জাকের ভাই আক্কাস আলী বিশ্বাস বলেন, তিনি ভাই হত্যার বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছেন। কে বা কারা রাতের আঁধারে আসামিপক্ষের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে, তা তিনি জানেন না।

জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকী বাদশা বলেন, এলাকায় ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছুই নেই। পুলিশের সংখ্যার চেয়ে ভাঙচুরকারীদের সংখ্যা বেশি থাকায় পুলিশ প্রতিরোধ করতে পারেনি।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোহসীন হোসাইন বলেন, ঘটনার পর থেকেই এলাকায় পুলিশের পাহারা রয়েছে। থানায় একটি হত্যা ও ভাঙচুরে ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। গ্রামটিতে পুলিশের কঠোর নজরদারি রয়েছে। তবে ভাঙচুরের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close