গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১৫ মার্চ, ২০২৩

সিরাজগঞ্জে রেশম চাষ

সিরাজগঞ্জে রেশমচাষে উদ্বুদ্ধ করতে রেশমকীট (পলু পোকা), তুঁত গাছ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড। চাষিদের উৎপাদিত রেশমগুটি কিনে নিচ্ছে তারা। এতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নদী ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষরা। স্থানীয় রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় এসব মানুষ গড়ে তুলেছেন রেশম সমবায় সমিতি। পলু পোকা পালন করে রেশম চাষে ঝুঁকছেন সমিতির সদস্যরা।

রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সিরাজগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি সহযোগিতায় রেশম চাষ করে মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। জেলার সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী, বাগবাটি, খোকশাবাড়ি ও উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনাতে ১০১ জন প্রশিক্ষিত নারী-পুরুষ রেশমকীট (পলু পোকা) পালন করছেন। এ জন্য সিরাজগঞ্জে যমুনার তীরবর্তী ওয়াপদা বাঁধের পাশে পতিত জায়গায় তুঁত গাছ রোপণ করছেন তারা। যমুনা চরের বেলে-দো আঁশ মাটিতে তুঁত গাছ রোপণের উপযোগী। প্রায় এক যুগ ধরে ভালো ফলন হওয়ায় যমুনায় ভাঙনকবলিত এ সব মানুষ অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছেন। এদিকে রেশম চাষিদের আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও রেশমকীট পালনের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে রেশম উন্নয়ন বোর্ড। এ রকম আরো ঘর বিতরণের কাজ প্রক্রিয়াধীন।

জানা গেছে, আগে রেশম চাষের জন্য পলু পোকার ১০০টি ডিম সংগ্রহ করতে ২০৫ টাকা খরচ হতো চাষিদের। তবে বর্তমানে তাদের বিনামূল্যে পলু পোকার ডিম সরবরাহ করছে বোর্ড। এ ছাড়া বোর্ডের পক্ষ থেকে তুঁত গাছও সরবরাহ করা হচ্ছে। চাষিদের উৎপাদিত রেশম গুটি প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা দরে কিনে নিচ্ছে বোর্ডের মাধ্যমে।

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শৈলাবাড়ী গ্রামের রেশম চাষি মরিয়ম বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রেশম চাষ করছি। রেশম চাষের ওপরই আমার সংসার চলে। রেশম চাষের উপার্জিত টাকা দিয়ে ছেলেকে এমএ (স্নাতকোত্তর), এক মেয়েকে বিকম (স্নাতক) পাস করিয়েছি, ছোট মেয়ে বিএ (স্নাতক) পড়ছে। আমার ঘরবাড়িও হয়েছে রেশম চাষের টাকায়। মরিয়ম বেগম আরো বলেন, ‘আমার স্বামী বেঁচে নেই। রেশম চাষের ব্যবস্থা না থাকলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাকে না খেয়ে মরতে হতো। এটা অনেক লাভজনক।’ রেশম চাষ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিলে অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

একই এলাকার ভূমিহীন রেশম চাষি হাসনা বানুর পুরো পরিবার রেশম চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘বছরে চার বার ১০০টি করে পলু পোকার ডিম ওঠাই। একবার ডিম ওঠালে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই রেশমের গুটি হয়। গত মৌসুমে প্রতি কেজি রেশম গুটি ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছি, এবারও সেই দামে বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। রেশম বোর্ড ডিম দেয়, আবার সেখানেই আমরা রেশম গুটি ওজন করে দিয়ে দেই।’

রেশম উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের টেকনিক্যাল সুপারভাইজার মো. জাহিদুল হাসান বলেন, ‘বর্তমানে রেশম চাষের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের মানুষ বেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই এলাকায় বেলে-দো আঁশ মাটিতে তুঁত গাছ ভালো জন্মে। তাই এখানে রেশম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।’

মো. জাহিদুল হাসান জানান, রেশম বোর্ডের পক্ষ থেকে চাষিদের মধ্যে নিয়মিত তুঁত চারা বিতরণ করা হয়। সেই তুঁত চারা ৩ বছর পর ফলনশীল হলে এর পলু পোকাকে খাওয়ানোর জন্য পাতা সংগ্রহ করা চাষিরা। রেশম চাষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি সহায়তায় নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে পলু পোকা ঘর। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার রেশম চাষিদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close