গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

স্কুল আছে শিক্ষার্থী নেই

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা ৪০ মিনিট। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষক অফিস কক্ষে বসে গল্প করছেন। বিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরে কোনো শিক্ষার্থীই নেই।

নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছয়টি শ্রেণিতে সর্বনিম্ন পঞ্চাশ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও ওই বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীও নেই। এমন চিত্র বিরাজওমান ২০১৮ সাল থেকে। কাগজপত্রে পাঁচজন শিক্ষক থাকলেও তারা নিয়মিত স্কুলে আসেন না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য কোনো নির্দেশক সাইনবোর্ড নেই, নেই কক্ষ নির্দেশক কোনো লেখা। শ্রেণিকক্ষে বোর্ড, বেঞ্চগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। বেঞ্চের ওপর রাখা বঙ্গবন্ধু কর্নারে এবং শেখ রাসেল স্মৃতি কর্নারে ধুলোর আস্তর পড়েছে। একটি কক্ষে গতবারের অবিতরণকৃত পাঠ্যবই দেখা যায়। উপস্থিত দুই শিক্ষক হাজিরা খাতা দেখাতে পারেননি।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকার কারণ জানতে চাইলে উপস্থিত সহকারী শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, শিক্ষার্থী নেই, কেউ ভর্তি হয়নি। গতবারের বই এখনো বিতরণ না করার কথা স্বীকার করে বলেন, ছাত্র-ছাত্রীই নেই বই কাকে দেব।

জানা গেছে, গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বিদ্যালয়টিতে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেটিরও কোনো কাজ করা হয়নি। স্থানয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে তেমন পড়াশোনা করানো হয় না, তাই ছাত্র-ছাত্রী কিন্ডার গার্টেনে ভর্তি করে দেন অভিভাবকেরা।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রায়হান বলেন, দুই-আড়াই মাস আগে আমাকে নতুন সভাপতি বানানো হয়েছে। স্কুলের অবস্থা মোটামুটি ভালো। আমি মাঝে মাঝে প্রধান শিক্ষককে মোবাইল করে খোঁজ খবর নেই। আর কোনো দরকার থাকলে স্কুলে যাই। এ সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে কথা তুললে তিনি এড়িয়ে যান।

কাজীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টির ব্যাপারে এর আগেও অভিযোগ পেয়েছিলাম। এবার আর ছাড় দেওয়া হবে না। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে বিদ্যালয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close