মোস্তাফিজ, তালতলী (বরগুনা)

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

তালতলীর পর্যটন কেন্দ্রে বাড়ছে অপরাধ, কমছে পর্যটক

বগুনার তালতলীর জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় বারবার ঘটছে চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা। এ কারণে দিন দিন পর্যটক কমে যাচ্ছে এখানকার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য টুরিস্ট পুলিশের জন্য দাবি জানিয়েছে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।

জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত। বাতাসের ঝিরঝির শব্দে দোল খায় সৈকতের সবুজ ঝাউবন। বালুময় দীর্ঘ সৈকত আর ঝাউবনের সবুজ সমীকরণের এ দৃশ্যটি যেন প্রকৃতি প্রেমের একটি উদাহরণ। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে পর্যটন কেন্দ্রে হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপজেলা নিবার্হী অফিসার বদরুদ্দোজা শুভ। তার নামের সঙ্গে মিল রেখেই পর্যটন কেন্দ্রটির নাম করণকরা হয় শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত পর্যটন কেন্দ্র।

এখানে দেখা গেছে, দৃষ্টিনন্দন দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, বহুকালের পুরনো বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বন, দলবেঁধে চলাচল করা বন্যপ্রাণীর বন্ধনী ও রঙ-বেরঙের পাখণ্ডপাখালিদের ঘর-বাড়ি, এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখার মুহূর্তটা কোনো পর্যটকের পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

এর পাশেই আরেক পর্যটন স্পট দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন খ্যাত টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বনে ১০-১১ ও ১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয় টেংরাগিরি ইকোপার্ক। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন এই ইকোপার্কটি। এই পার্কে দেখা যায়, মায়াবী হরিণ, কাঠবিড়ালি, কুমির, বানরসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণী ও সুন্দরবনের হাজারো রকমের গাছ। 

কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে টুরিস্ট পুলিশ না থাকায় চুরি ছিনতাইসহ নানা অপরাধ হচ্ছে। এমনকি শুভসন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে উদ্ধারকর্মীর অভাবে গত ১৩ জুলাই এক স্বজনসহ পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় এক এনএসআই সদস্যসহ দুই পর্যটকের। এর আগে ২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল সন্তান নিয়ে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক নারী। এর আগে গত ৩১ মার্চ টেংরাগিরি ইকোপার্কে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক পর্যটক। এছাড়াও ইকোপার্কে কুমিরের আক্রমণে নিহত হয়েছেন আরও এক পর্যটক। ইভটিজিং আর ছিনতাই এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

ট্যাংরা গিরি ইকো পার্কে কুমিল্লা থেকে ঘুরতে আসা কারিমা জাহান রিমা নামে এক পর্যটক বলেন, ২০১৮ সালে একবার কুয়াকাটা এসেছিলাম। সেখানে এসে জানতে পারি বরগুনার তালতলীর টেংরাগিরি ইকোপার্কের কথা। তখনই আমরা এখানে এসেছিলাম। কুয়াকাটায় তো শুধু সমুদ্র সৈকত, কিন্তু এই পার্কে এসে তখন আমি মুগ্ধ হয়ে ছিলাম। কি নেই এখানে? হাজার প্রজাতির গাছের বন, বনে রয়েছে সুন্দরবনের মতোই নানান সব প্রাণী।

গভীণ অরণ্যে হাঁটতে থাকলে দেখা মিলবে অপরূপ সমুদ্র সৈকত। সেই মুগ্ধতা থেকে আমি আবারও এসেছি। কিন্তু এখানে স্থানীয় বখাটেদের উৎপাতে আমরা অস্থির।

তিনি আরও বলেন, এই পার্কে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। বকাটেরা তাদের মতন করে ইভটিজিং করে যাচ্ছে আর পর্যটকরা সহ্য করে যাচ্ছে।

বরগুনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন ফসল বলেন, টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকতে অসংখ্য পর্যটক আসত। এসব এলাকার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে বিভিন্ন রকমের দোকানসহ ব্যবসা শুরু করেছিল। অনেক ব্যবসায়ীরা জমি কিনে আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাও করতে চেয়েছিল। কিন্তু কিছু মাদকাসক্ত বখাটেদের জন্য পর্যটকও কমছে। এখানে টুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প হলে পর্যটকদের

নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। অসংখ্য নিম্ন এর মানুষের ভাগ্য বদলাবে।

টুরিস্ট পুলিশের বিষয় বরগুনার পুলিশ সুপার মো. আব্দুস ছালাম বলেন, টুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ক্যাম্প স্থাপনের আগ পর্যন্ত তালতলী থানা পুলিশ দিয়ে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।

এ বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইতোমধ্যেই প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া তালতলীর সোনাকাটা ইকোপার্ক সংলগ্ন এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনেরও প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close