মমতাজুর রহমান, আদমদীঘি (বগুড়া)

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

শিশুর কাঁধে বইয়ের বোঝা

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিক বিবেচনা করে সরকার ব্যাগের ওজন কমাতে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কমিয়ে দিলেও কোনো কোন স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকটা জোর করে তাদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। এতে শিশুদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিবিটি) নির্ধারিত বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের হাতে বাড়তি বইয়ের তালিকা দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়াও কিন্ডার গার্টেন স্কুলের বই নিয়ে লাইব্রেরি, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রকাশনীগুলো রমরমা বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায়।

সরকার নির্ধারিত পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বৃদ্ধি করা হয়েছে অতিরিক্ত আরও তিন থেকে আটটি নির্ধারিত বই। নির্বিঘ্নে বই বাণিজ্যের লভ্যাংশ হাতিয়ে নিতে নির্দিষ্ট করেছেন বই প্রাপ্তির স্থান লাইব্রেরিগুলো। এর ফলে লাইব্রেরিগুলো থেকে উচ্চ মূল্যে বইগুলো কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোতে শিক্ষা ব্যবস্থার মান যাই হোক না কেন মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফিসহ বছরে নানা কৌশলে নানান ফন্দি ফিকিরে অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করে থাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তারপরও ভালো শিক্ষার আশায় শিশুদের ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছে অভিভাবকরা। এর ফলে প্লে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত বই কিনতে খরচ হয় দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত তিন হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এ বইগুলোর স্বাভাবিক মূল্য সর্বোচ্চ সাড়ে ৫০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। বই বাণিজ্যের লভ্যাংশের ভাগ নিচ্ছে বিভিন্ন বই প্রকাশনা কোম্পানি, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও লাইব্রেরির মালিকরা। প্রতিটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত লাইব্রেরিগুলোতে তাদের স্কুলের বুক লিস্ট দিয়ে রেখেছে। আর সেখান থেকে বই কিনতে বাধ্য করছেন অভিভাবকদের। এর ফলে বইয়ের ময়লাটে লেখা উচ্চ মূল্যেই বইগুলো কিনতে হচ্ছে অভিভাবকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদমদীঘি উপজেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত ও রেজিস্ট্রেশন বিহিন ৩৬টি কিন্ডার গার্টেন ও নার্সারি স্কুল রয়েছে। এর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক। এসব কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোর অতিরিক্ত বইয়ের মধ্যে শিশু শ্রেণীতে রয়েছে শিশুর হাসি প্রকাশনীর ছোটদের সবুজ সাথী ২০০ টাকা, আমার অঙ্ক লেখণ্ড (১) ২০০ টাকা, কালার কিং প্রকাশনীর চাইল্ড লার্নিং এবিসি ১৫০ টাকা, বুক ভিশন প্রকাশনীর জানতে হলে পড়তে হবে ১৮৫ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্ড বুক ১৮৫ টাকা, চারুকলা প্রকাশনীর রং ভরি মজা করি ১৮৫ টাকা, মায়ের লেখায় আমি লিখি (২) ২০৫ টাকা ও মাই হ্যান্ড রাইটিং বুক (২) ২২০ টাকা। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণীতে রয়েছে বুক ভিশন প্রকাশনীর ভাষা সৌরভ বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিত রচনা ২৬০ টাকা, গুণতে গুণতে অঙ্ক শেখা (২) ২১২ টাকা, এক্সপার্ট কমিউনিকেটিভ ইংলিশ গ্রামার ২৬৫ টাকা, সোনামণিদের কম্পিউটার শিক্ষা (১) ১৯০ টাকা, জানতে হলে পড়তে হবে (২) ২১০ টাকা, ইসলামী পাবলিকেশনস এর ছোটমণিদের আরবি ও ইসলাম শিক্ষা (২) ২১০ টাকা, ও চারুকলা প্রকাশনীর রং ভরি মজা করি (২) ১৮৫ টাকা।

এছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে ছাপানো নজর কাড়া বিভিন্ন বই উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে লাইব্রেরিগুলো। তাই প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি বইয়ের দাম উচ্চ মূল্য হওয়ায় অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু লাইব্রেরি মালিক জানান, বই প্রকাশনা কোম্পানি আর স্কুল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে হচ্ছে এ বই বাণিজ্য। ৫০ থেকে ১৫০ টাকা মূল্যের বইয়ের দাম হচ্ছে ১৮৫ থেকে ২৫০ টাকা। এ বই বিক্রি করে লাইব্রেরির মালিকরা ১০% থেকে ১৫% লভ্যাংশ পেলেও এর ৬০% থেকে ৬৫% লভ্যাংশ ভাগ করে নিচ্ছে বই বাণিজ্যে লিপ্ত বই প্রকাশনা কোম্পানি আর স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে উপজেলা সদরের কয়েকটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সরকারি পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বই পাঠ্য করার নিয়ম না থাকলেও শিশুদের ভালোর জন্যই এসব অতিরিক্ত বই পড়ানো হয়ে থাকে। এর ফলে শিশুদের নানামুখি শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে। এ ব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুল ইসলাম দেওয়ান বলেন, উপজেলার অনেক কিন্ডার গার্টেন স্কুলের রেজিস্ট্রেশন নেই এবং কিছু কিছু স্কুলের রেজিস্ট্রেশন থাকা সত্বেও এরা কোনো নিয়মণ্ডনীতির তোয়াক্কা করে না। কিন্ডার গার্টেনগুলোকে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করে নিয়ম নীতির মধ্যে আনা প্রয়োজন। এসব উচ্চ মূল্যে অতিরিক্ত বই কিনে একদিকে যেমন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাঁধে বইয়ের বোঝা তুলে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতারিত হচ্ছেন অভিভাবকরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close