আবদুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার
ভূমির অধিকার চান খাসিয়ারা
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরেও ভূমির অধিকার পাননি মৌলভীবাজারের সমতলে বসবাসকারী আদিবাসীরা। হামলা-মামলার ভয়ে এখনো অনেক পল্লীতে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। আছে নানা হয়রানি। এক শ্রেণির ভূমিদস্যুরা সামাজিক বনানয়নের নামে খাসিয়াদের ভূমি দখলে তৎপর রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মৌলিক অধিকার আদায়ে আন্দোলনে যাচ্ছে ৮০টি খাসিয়াপুঞ্জির নাগরিকরা। ২৬ জানুয়ারি জেলা সদরে সংবাদ সম্মেলনে এমন আভাস দিয়েছেন আদিবাসী নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, কুবরা আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংস্থার সভানেত্রী ফ্লোরা বাবলী তালাঙ জানান, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের ৮০ পুঞ্জিত প্রায় ৪০ হাজারের মতো আদিবাসী বসবাস করছে। বংশ পরস্পারায় তারা পরিবেশ বান্ধব পান চাষ করে নিজেদের জীবিকা রক্ষা ও বনাঞ্চলকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে আইএল কনভেনশনে ১২০ নম্বর সভার ১০৭ অনুচ্ছেদ অনুস্বাক্ষর করে আদিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণ করেন। কিন্তু ৫০ বছরেও এ এলাকার আদিবাসীরা তাদের ভূমির অধিকার পায়নি। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ঝিমাই পুঞ্জির সঙ্গে ঝিমাই চা বাগান কেদারপুর টি কোম্পানি লিমিটেডের চলমান ভূমি বিরোধ, ঝিমাই চা বাগান কর্তৃক ঝিমাই পুঞ্জির পানজুমের আওতাধীন প্রায় দুই সহস্রাধিক প্রাকৃতিক গাছ কাটার প্রচেষ্টা চলছে। পুঞ্জিতে ৭২টি খাসিয়া পরিবারের বসবাস, যাদের সবারই পেশা পান চাষ। আদিবাসীদের বসতভিটা, বিদ্যালয়, গির্জা, কবরস্থান সর্বোপরি তাদের জীবন জীবিকা বিপন্ন হওয়ার আশংকা তৈরি হওয়ায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ঝিমাই চা বাগানের মালিক পক্ষ ঝিমাই পান পুঞ্জির কয়েক হাজার প্রাকৃতিক বৃক্ষ কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে। তিনি ঝিমাই পুঞ্জির প্রাকৃতিক বৃক্ষ কর্তন বন্ধ, পুঞ্জিতে স্বাভাবিক যাওয়া আসার সুযোগ করে দেওয়া, ডলুছড়া নুনছড়া ও ভেলকুমা খাসিয়া পুঞ্জির নাগরিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা সকল মামলা প্রত্যাহার করে আদিবাসীদের নিশ্চিত জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান রানা সুরং বলেন, ২০০৮ সালে হঠাৎ করে ঝিমাই চা বাগানের মালিক কেদারপুর টি কোম্পানির লোকজন খাসিয়া পুঞ্জির জমি দখলের পাঁয়তারা করে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আপিল বিভাগে রিভিশন মামলা চলমান। কিন্তু এর তোয়াক্কা না করে এখন কয়েক হাজার প্রাকৃতিক গাছ কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
তাদের দাবিগুলো হলো, ঝিমাই খাসি পুঞ্জির পান জুমের প্রাকৃতিক গাছ বিধি বহির্ভূতভাবে কাটার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে। ঝিমাই পুঞ্জির যাতায়াতের রাস্তায় চা বাগান কর্তৃপক্ষের সকল বাধা অপসারণ করতে হবে। ডুলুকছড়া, বেলকুমা, নুনছাড়াসহ বিভিন্ন পুঞ্জির আদিবাসীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সামাজিক বনায়নের আড়ালে প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আদিবাসীদের ভোগ দখলীয় প্রাকৃতিক বনভূমিতে কোন প্রকার সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। খাসিয়া পানচাষ পদ্ধতিকে বিশেষ কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে উৎপাদন ও বিপণনের সকল পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। বিনা সুদে কৃষি ঋণ ও পানের ন্যায্য বাজার মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ প্রভৃতি নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমির মালিকানা ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল নিশ্চিত করতে হবে। বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের লক্ষে বিশেষ ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। পান চাষের একমাত্র অবলম্বন প্রাকৃতিক গাছ কেটে আদিবাসীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসান বলেন, আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
"