মমতাজুর রহমান, আদমদীঘি (বগুড়া)

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩

সেতুর অপেক্ষায় ৫২ বছর

দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটাতে বিলপাড়ের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হন। আবার কাজ শেষে নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসেন আপন ঠিকানায়। সেখানে সেতু না থাকায় এপারের লোকজন ওপারে আত্মীয়তাও করতে চান না। এ অবস্থায় কেটে গেল স্বাধীনতার ৫২টি বছর। অথচ আজও সেখানে হয়নি সেতু। আক্ষেপটি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রক্তদহ বিলপাড়ের মানুষের।

জানা যায়, প্রতিদিন রক্তদহ বিলপাড়ের ২৫-৩০ গ্রামসহ এর আশপাশের এলাকার লাখো মানুষ শত বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে নৌকায় পারাপার হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ দৈনন্দিন জীবনের নানা চাহিদা মেটানোর জন্য নওগাঁ জেলা সদর, বগুড়ার সান্তাহার জংশন, রাজশাহী ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য শহরে যাতায়াত করে। বর্ষা মৌসুমে রক্তদহ বিলপাড়ের মানুষের সান্দিড়া-বোদলা খেয়াঘাটের নৌকা একমাত্র ভরসা। বর্ষা মৌসুম শেষ হলে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বিলের পানি কমে গেলে পারাপারে নৌকা আর চলে না। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। অনেকে নৌকা না পেয়ে সাঁতার দিয়ে বিল পার হয়।

আদমদীঘির সান্দিড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক জানান, বোদলা-সান্দিড়া ঘাটে সেতু নির্মাণ হলে দুইপারের মানুষের মাঝে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি হবে। খুলে যাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার, ঘুচবে বেকারত্ব। কৃষক সহজেই ধানসহ অন্য শস্য ঘরে তুলতে পারবেন।

বোদলা গ্রামের বাসিন্দা দাউদুল হক বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু জেতার পর কেউ আর খোঁজ রাখেন না। বিএনপির শাসনামলে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের কাছে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে বহুবার দাবি জানানো হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি ফের উত্থাপনের পর সেতু নির্মাণের জন্য একনেকে অনুমোদন হয়। এরপর সেখানে মাটি পরীক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেখানে সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।

আদমদীঘি উপজেলা প্রকৌশলী রিপন কুমার সাহা জানান, সেতুটি রাণীনগর উপজেলার মধ্যে হওয়ায় নির্মাণের দায়িত্ব তাদেরই। আমার জানামতে, সেতুর জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে সেখানে খাল খননসহ বিভিন্ন প্রকল্প করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে আমারা সেগুলোর প্রস্তাব পাঠিয়েছি।

রানীনগর উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাঈল হোসেন জানান, সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো রয়েছে। এটি একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করেছে এবং সেখানে সেতু আরো সম্প্রসারণ করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খেয়াঘাটটি নওগাঁর রাণীনগরের বোদলা, পালশা ও তেবারিয়াসহ ১১ গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজ পথ। খেয়াঘাটের দুই পাড়ের মানুষের অর্ধশত বছরের কাঙ্খিত একটি সেতু নির্মাণ হলে কমে যাবে প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা। দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রচেষ্টার পর ২০১৯ সালের শেষের দিকে খেয়াঘাটের সেতুটি একনেকে অনুমোদন হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেসময় এলাকায় আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করে। পরবর্তীতে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন সাধারণ মানুষের মাঝে দুঃখ নেমে এসেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close