দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষক সংকটে একাডেমিক কার্যক্রমে ধীরগতি

শিক্ষক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষা কার্যক্রম। প্রায় প্রতিটি বিভাগে অপর্যাপ্ত শিক্ষক থাকায় একাডেমিক কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকায় অনেক বিভাগই একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে এবং একই শিক্ষক একাধিক কোর্সে ক্লাস নেওয়ার ফলে শিক্ষার গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের বিভাগে বর্তমানে ১১ জন শিক্ষকের আটজনই শিক্ষা ছুটিতে। তিনজন শিক্ষক তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন পাঁচটি ব্যাচের একাডেমিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে। কিন্তু তিনজনের পক্ষে দশজনের কাজ করা সম্ভব নয়। এছাড়া অমাদের বিভাগটি ল্যাব নির্ভর হওয়ায় বিষয়টি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আমাদের শিক্ষাবর্ষের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা যখন স্নাতক সম্পন্ন করে আমরা তখন চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ভাইবা-ই শেষ করতে পারিনি।

শুধুমাত্র রসায়ন বিভাগেই নয় একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আরো বেশ কয়েকটি বিভাগের। এসব বিভাগের মধ্যে মার্কেটিং বিভাগে ছয়জন শিক্ষকের মধ্যে চারজন এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে তিনজন শিক্ষা ছুটিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৯৪ জন শিক্ষক থাকলেও তাদের মধ্যে অন্তত ৯৬ জন শিক্ষকই আছেন শিক্ষা ছুটিতে। ইতোপূর্বে শিক্ষা ছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকরেও সম্প্রতি এ ধরনের নিয়োগ বন্ধ করে দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চরমে পৌঁছেছে শিক্ষক সংকট।

এই বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস বালা বলেন, যদি স্কলারশিপগুলো ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে দিত তাহলে শিক্ষকদের বলা যেত আপনি এখন ছুটি না নিয়ে পরবর্তীতে ছুটি নেন। কিন্তু যখন পদোন্নতিসহ সর্বত্র উচ্চতর ডিগ্রির শর্ত থাকে এবং একজন শিক্ষক নিজের মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে স্কলারশিপ অর্জন করে তখন শিক্ষা ছুটি অনুমোদন না দেওয়াটা তার সঙ্গে অন্যায় করা হবে। অমাদের বিভাগে চলতি শিক্ষাবর্ষে সপ্তম ব্যাচ আসতে যাচ্ছে। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী আমাদের এখন অন্তত ১৭ জন শিক্ষক থাকার কথা কিন্তু সেখানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ছয়জন। শিক্ষা ছুটির বিপরীতে শিক্ষক নিয়োগ পরবর্তী বিষয়, ইউজিসি প্রথমে অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বাকি ১১ জন শিক্ষক নিয়োগ দিক।

পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বলেন, ইউজিসির এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কেন এত অনীহা জানা নেই। আমি শিক্ষক পদের জন্য তাদের সঙ্গে অনেক বাকবিত-া করেছি। আমি তাদের জানিয়ে দিয়েছি যে, তারা যদি শিক্ষক না দেয় তাহলে আগামীতে আমরাই সার্কুলার দিব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় যখন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করেই শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে তখন সেখানে শিক্ষক সংকট হবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি। একজন শিক্ষকের শিক্ষা ছুটি অনুমোদনের আগেই চিন্তা করতে হবে তার শিক্ষা ছুটির ফলে বিভাগ সমস্যার মুখোমুখি হবে কিনা। সাধারণত সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শিক্ষককে শিক্ষা ছুটিতে রাখা য়ায়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি ৪০-৫০ শতাংশ শিক্ষককে শিক্ষা ছুটি দিয়ে তাদের বিপরীতে নতুন শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানায় সেটিতো সম্ভব নয়। যেসব শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকেন তারা পূর্ণ বেতনেই ছুটিতে থাকেন, তাদের বিপরীতে নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে একটি পদের জন্য দুজনের বেতন বহন করতে হবে। এসব কারণে চাইলেই শিক্ষা ছুটির বিপরীতে নতুন শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close