সিরাজগঞ্জ ও রৌমারী প্রতিনিধি

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩

ব্রহ্মপুত্রে বালুচর, যমুনায় ভাঙন

শুষ্ক মৌসুমে যেখানে নাব্য সংকটে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরি, চৌহালির বাঘুটিয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একদিকে ভাঙন আরেক দিকে নাব্য সংকটে বিপাকে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী মানুষেরা।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোমবার সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই যমুনা নদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধ এলাকার প্রায় ৬০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে।

উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জহুরুল ইসলাম জানান, ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি নদীর পূর্ব পাশে জেগে উঠা চর কেটে দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় আগামী বর্ষা মৌসুমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশপাশের বেশকিছু এলাকা হুমকির মুখে পড়বে।

পাউবো সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, যমুনার বাম তীরে চর জেগে উঠায় ডান তীরে পানি প্রবাহ এবং চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাঁচঠাকুরিসহ ভাঙনকবলিত বিভিন্ন স্থানে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নদীর ডান তীর রক্ষার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগের নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের সংস্কার কাজ শেষ করা হবে।

রৌমারী প্রতিনিধি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকটে চিলমারী নৌবন্দর, ফকিরের হাট, রৌমারী লডঘাট, কর্তিমারী, বলদমারা, ঘুঘুমারী, খেওয়ারচর, রাজিবপুর লডঘাট, মোহনগঞ্জ, কোঁদালকাটি ও নয়ারচর নৌপথে নৌকা চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। গত দেড় মাস ধরে নাব্য সংকট থাকলেও তা উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও নৌকার মাঝিরা।

নৌকার মাঝি সমেজ উদ্দিন বলেন, ফলুয়ারচর ও বলদমারা থেকে ফকিরেরহাট ঘাটে নৌকা যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে, আগে এক ঘণ্টায় যেতাম। পানি না থাকায় সময় বেশি লাগে। নদীর মাঝে নৌকা আটকে গেলে সারা দিন শেষ হয়ে যায়, যাত্রীরা হয়রানির মধ্যে পড়েন। আমাদের নদী পথে ব্যবসার দিন শেষ।

মাঝি নিলচাঁন মেকার বলেন, বলদমারা ঘাট থেকে আমরা এক ঘণ্টার মধ্যেই ফকিরের হাট ঘাটে যেতাম। শীতে ঘন কুয়াশার কারণে ও নদীর পানি কমে যাওয়ায় ওনেক মাঝি পথ হারিয়ে ফেলেন। এজন্য অন্য ঘাটে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগছে।

রিপন মিয়া বলেন, কর্তিমারী ঘাট থেকে সকাল ১০টার মধ্যেই কুড়িগ্রাম কোর্টে পৌঁছানো যেত, আদালতে হাজিরা দিয়ে আবার বাড়ি আসতাম। এখন সকালে বাড়ি থেকে বের হলেও নদীতে পানি না থাকায় কুড়িগ্রাম পৌঁছাতে ১২টা বাজে। এ কারণে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।

পাথর ব্যবসায়ী আলহাজ মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ছোট ছোট অসংখ্য চর জেগে ওঠার কারণে পণ্যবাহী নৌকা রৌমারী, বলদমারা ঘাটে আসে না। ফকিরের হাট, চিলমারী, কুড়িগ্রাম নৌকা ঘাট থেকে মালামাল নৌপথে রৌমারী আনা যাচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। জরুরী ভিত্তিতে নদী ড্রেজিং করে নৌপথ সচল না করলে নৌপথে ব্যবসা ও যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যাবে।

রৌমারী ও চর রাজিবপুর লডঘাট ইজারাদার মো. শফিউল আলম বলেন, নাব্য সংকটের কারণে আমাদের আয় অনেক কমেছে। নদের পানি কমে গিয়ে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় উলিপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার সঙ্গে চিলমারী, ফকিরের হাট, কুড়িগ্রাম নৌঘাটে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নাব্য সংকট দূর করতে নৌপথ ড্রেজিং করে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নদের বুকে ছোট ছোট চর জাগায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে নাত্য সংকট দেখা দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close