গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩

খরস্রোতা যমুনায় ডুবোচর

সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। এতে যমুনায় নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কোথাও কোথাও এক কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছাতে পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। সময় ও জ্বালানি খরচ বেশি হওয়ার কারণে অনেক মাঝি নৌকা চালানো বন্ধ রেখেছে। চরাঞ্চলের মানুষকে হেঁটে চর পাড়ি দিয়ে একাধিকবার নৌকায় পার হয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। ডুবোচরের কারণে এক ঘণ্টার নদীপথ পার হতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন অগণিত মানুষ জেলা শহর ও উপজেলা প্রশাসন, থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছে। নৌযান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া শহর এলাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরাঞ্চলের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন যমুনা নদী পার হয়ে লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন যমুনা নদী পার হয়ে আসা মানুষের অনেকটা সময় নষ্ট হয়।

কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নের খাসরাজবাড়ী চরের রাজ্জাক বলেন, চর ঘুরে কাজিপুরে আসতে প্রায় দুই ঘণ্টা বেশি সময় লাগে। মেঘাই হাটে লাউ, বেগুন বিক্রি করতে আসা নাটুয়ারপাড়া চরের ফুলজোর গ্রামের ওমর আলী বলেন, মেঘাই আসতে দুবার নদী পার হতে হয়। নৌকা নিয়ে আসতে অনেক সময় লাগে।

ছিন্না চরের শিক্ষার্থী মাহমুদ হোসেন, ছালাল চরের শিক্ষার্থী দুলাল হোসেন জানান, শুষ্ক মৌসুমে যমুনা নদীতে অসংখ্য চর জেগে উঠায় নদী পার হতে অনেক জলপথ ঘুরে আসতে হয়। সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বাড়ি থেকে ভোরে বের হয়ে স্কুল-কলেজ শেষ করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বড় শিমুল চরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, কৃষি পণ্য নিয়ে ভোরে সিরাজগঞ্জ শহরে নৌকায় আসতে অনেক সময়ই বাজারের বেলা চলে যায় যে কারণে আমাদের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

কাজিপুর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রাজমহর বলেন, শুষ্ক মৌসুমে যমুনা নদীর বিভিন্ন শাখা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই চরবাসীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও রোগীদের কষ্ট আরো বেড়ে যায়। আবার নদীতে পানি আসলে মানুষ ভোগান্তি থেকে রেহাই পায়। দুঃখ কষ্ট আর ভোগান্তি নিয়েই চরবাসী বেঁচে আছে বলে তিনি জানান।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সি বলেন, পানি কমে যাওয়ায় ক্যানেলে নৌকা আটকে যাওয়ায় দুর্ভোগ বাড়ছে। এছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে মাঝি দিক হারিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় চরবাসী কাজ করে বাড়ি ফিরতে পারছে না। অনেক সময় শহরে আত্মীয় বা হোটেলে রাত্রীযাপন করতে হয়। কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালি ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ নদী ভাঙন, বন্যা ও খরার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close