এক সময়ের আশীর্বাদের সুতাং নদী এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত দখল-দূষণের কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আবার নদীর পানি শরীরে লেগে বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় নদীপাড়ের মানুষের জীবন এখন হুমকির মুখে।

শিগগিরই নদী দূষণ বন্ধ না হলে তিন উপজেলার দুই শতাধিক গ্রামের লোকজনের স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নদীটি। ফলে জৌলুস হারিয়ে সুতাং নদীর বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে আশপাশের তিনটি উপজেলার বাসিন্দাদের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুতাং নদী হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ, সদর উপজেলা ও লাখাই উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে শেষ হয়েছে মোহনা। নদীটির দৈর্ঘ্য ৮২ কিলোমিটার। আগে নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে মৎস্যজীবীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে মাছ সরবরাহ করতেন। পাশাপাশি নদীর পানি আশপাশের জমিতে কৃষিকাজে ব্যবহার করা হতো। এখন অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে পরিবেশ ও মাছের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, এক সময় সুতাং নদীতে সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত। এখন শিল্প বর্জ্যরে কারণে পানি দূষিত হয়ে মাছ মরে গেছে। বর্জ্যরে বিষাক্ত পানিতে গ্যাস সৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পানি শরীরে লাগলে বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু ছড়ায়। দূষিত পানির গন্ধে এলাকায় বসবাস করার দায় হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সাধুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী কাজী মহারাজ জানান, পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে নদীর পানি ধানের জমিতে দিলে ধানের চারা মরে যায়। এখানকার গরু-ছাগল, হাঁস নদীতে নামানো হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গুলনাহার বেগম জানান, নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। আমরা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় নাখণ্ডমুখ ঢেকে আসতে হয়। গন্ধে এলাকায় থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা হারিসুল হক জানান, সুতাং নদী এক সময় মাছে ভরপুর ছিল। নদী থেকে মাছ ধরে এলাকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু বর্তমানে বিষাক্ত বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। বারবার প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যাবে।

ভাদগরি গ্রামের মফিজুল হক জানান, সুতাং নদীর পানি বিষাক্ত হওয়ার কারণে আমরা নদী পার হয়ে আসা-যাওয়া করায় ডাক্তারের কাছে প্রতিনিয়ত সিরিয়াল ধরতে হয়। পানি শরীরে লাগলেই বিভিন্ন স্থানে পচন ধরে। হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, এক দশক থেকে হবিগঞ্জে শিল্প দূষণ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন নদী দূষণের চরম আকার ধারণ করেছে। শতাধিক কল কারখানার বর্জ্যে নদী ও জলাশয়ে নিক্ষেপের ফলে দিন দিন নদী দূষণ বেড়েই চলছে। বিশেষ করে সুতাং নদী এখন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দূষণের কারণে সুতাং নদী ঘেরা লোকজন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এলাকার পরিবেশ ও মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে নদী রক্ষা করা না হলে সাধারণ লোকজন উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে না।

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, নদী দূষণকারীদের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কলকারখানার দূষিত বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়, তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"