তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
শিশুখাদ্যে উত্তাপ খাবারেও টান
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এবার টান পড়ছে শিশুখাদ্যে। উচ্চমূল্যে শিশুদের জন্য বাজারের প্যাকেটজাত খাদ্য কিনে খাওয়াতে হিমশিম অবস্থায় পড়ে গেছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। প্যাকেটজাত দেশি ও আমদানি করা শিশু খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে খাদ্য কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক অভিভাবক।
তাড়াশ পৌর এলাকার আবদুল কাদেরের আট মাস বয়সি সন্তান রয়েছে। সন্তানটির মায়ের বুকের দুধ খেয়ে পেট ভরে না। তাই বাজারে বিক্রি হয় এমন দেশি ও আমদানি করা নানা ধরনের শিশু খাদ্য যেমন- বায়োমিল্ক, লাকট্রোজেন, সেরিলাক্স বা গুঁড়ো দুধ জাতীয় প্যাকেটজাত খাবার কিনে বাড়তি খাবার খাওয়াতে হয়। পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে প্যাকেটজাত শিশু খাদ্য কিনতে আবদুল কাদেরের মাসে খরচ হত দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় এমন সব ধরনের ভিন্ন ভিন্ন ওজনের প্যাকেটজাত গুঁড়ো দুধ বা নানা ধরনের শিশু খাদ্যের দাম প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। পাশাপাশি শিশুটির শারিরিক বৃদ্ধির সাথে খাবারের পরিমানও বাড়ার কারণে আব্দুল কাদেরের শিশু সন্তানের খাবার খরচ আড়াই হাজার থেকে বেড়ে এখন চার হাজারে দাঁড়িয়েছে। এতে স্বল্প আয়ের আব্দুল জাব্বার এখন শিশুটির খাবারের বাড়তি খরচ আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এমতাবস্থায় তিনি সন্তানের খাবারের পরিমান কমিয়ে দিয়েছেন।
এ অবস্থা শুধু আব্দুল কাদেরের নয়। উপজেলার শত শত ০- থেকে দুই বছর বা ততউর্ধ্বে বয়সী শিশুর অভিভাবকদের। আর বর্তমানে উচ্চ মূল্যে তাঁদের শিশু সন্তানদের জন্য বাজারের প্যাকেটজাত শিশু খাদ্য কিনেতে তাদের হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। তাই প্যাকেটজাত দেশীও আমদানী করা শিশু খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে শিশু খাদ্য কম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক অভিভাবক। এমনটি জানান, তাড়াশের বারোয়ারী বটতলা মহল্লার শিপ্রা ঘোষ। তিনি আরো জানান, অনেক মা- বাবা বাজারের বেশী দামের শিশু খাদ্য কিনে খাওয়াতে না পারায় তাদের সন্তান বিকল্প খাদ্য হিসেবে চালের গুড়া আর গাভীর দুধ মিশিয়ে এক ধরনের খাবার বানিয়ে তা খাওয়াচ্ছেন।
তাড়াশ সদর বাজারের মেরাজ স্টোরের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সাত থেকে আট মাস আগে তাঁর দোকানে এক সপ্তাহে ২৪ থেকে ৩০ প্যাকেট প্যাকেটজাত দুধ জাতীয় শিশু খাদ্য বিক্রি করলেও সেখানে এখন এক মাসে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২২ থেকে ২৮টি প্যাকেট।
এ দিকে বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাত থেকে আট মাসের ব্যবধানে এখন বাজারের সকল প্রকার প্যাকেটজাত শিশু খাদ্যের সাথে নিন্ম, নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের খাওয়ানো হয় এমন গরুর দুধ, সুঁজি, মালটা, বেদনা বা আনার, আঙ্গুরসহ সকল ফলের দামও প্রকারান্তে অস্বাভাবিক বেড়েছে।
বায়োমিল্কের ১৮০ গ্রামের প্রতিটি প্যাকেট সাত থেকে আট মাস পূর্বে বিক্রি হত ২০০ থেকে ২১০ টাকা। অথচ এখন প্যাকেটজাত ১৫০ গ্রামের ওই বায়োমিল্ক বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। সেখানে ৩০ গ্রাম দুধও কম। আবার বায়োমিল্কের ৪০০ গ্রামের টিনের কৌটার শিশু খাদ্যটি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৬৯০ টাকায়। যা পূর্বে ছিল ৪৮০ থেকে ৪৯০ টাকা। সাত-আট মাস পূর্বে লাকট্রোজেন ১৮০ গ্রাম ওজনের প্রতি প্যাকেটজাত শিশু খাদ্য বিক্রি হত ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। তা এখন ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে সব ধরণের প্যাকেটজাত শিশু খাবারের দাম বেড়েছে।
শিশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে লতা খাতুন, জুলেখা, পারভীন নামের তাড়াশ উপজেলা সদরের শিশুর মায়েরা অভিন্ন সুরে জানান, অনেক শিশু মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমান পায়না বা তা খেয়ে পেট ভরে না। আবার শিশুর বাড়ন্ত বাড়াতে অনেক বাবা- মা বাজারে পাওয়া যায় এমন শিশু খাদ্য যেমন দুধ বা ফলের রস খাওয়ান। কিন্তু বর্তমানে শিশু খাদ্যের সঙ্গে ফলেরও দাম বেড়েছে।
তাড়াশ পুরান বাজারের শিশু খাদ্য বিক্রেতা রতন সাহা বলেন, শিশু খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে বর্তমানে তাদের বেশী পুঁজি খাটাতে হচ্ছে। তারপরও আগের চেয়ে বিক্রি কম।
"