নরসিংদী প্রতিনিধি

  ০৩ ডিসেম্বর, ২০২২

মাধবদীতে মাদরাসার গোসলখানায় শিশুর লাশ

আফরিনের মতো মরল মাইশাও

পরিবারের দাবি ধর্ষণের পর হত্যা

নরসিংদীর মাধবদীর একটি মাদরাসার গোসলখানা থেকে মাইশা আক্তার (১০) নামে এক শিশুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির পরিবারের দাবি ধর্ষণের পর হত্যা করে তার মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মাইশার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাতে মাধাবদীর কুঁড়েরপার জামিয়া ক্বওমিয়া মাদরাসার গোসলখানা থেকে মেয়েটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

গত মাসেও আফরিন বেগম নামে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই মাদরাসার গোসলখানায় গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে আফরিনকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার পর আত্মহত্যার নাম দেওয়া হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

মাইশা ওই মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ও ভগিরথপুর গ্রামের নেছার উদ্দিন মেয়ে। শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে মরদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মেয়েটির বাবা নেছার উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার পর গলায় রশি পেঁচিয়ে মাদরাসার গোসলখানায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

এলাকাবাসী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, গত মাসেও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আফরিন বেগমকে একইভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মাদরাসার গোসলখানায় গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে আফরিনকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার পর আত্মহত্যার নাম দেওয়া হয়। একই ঘটনা ঘটল মেধাবী ছাত্রী মাইশার আক্তারের সঙ্গেও। তাকেও ধর্ষণের পর গলায় রশি পেঁচিয়ে মিথ্যা আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে মাদরাসাটিতে একে একে দুটি মেয়েকে অকালেই জীবন দিতে হলো। এর কোনো বিচারই হয়নি অদৃশ্য শক্তির কারণে।

মাইশার চাচা মাওলানা মোছলেহ উদ্দিন বলেন, মাইশার বাবা সকালে মেয়েকে মাদরাসায় গিয়ে নাস্তা করিয়ে রেখে আসে। পরে দুপুরে পারিবারিক একটি দাওয়াতে মাইশার পরিবারসহ আমরা আত্মীয়র বাড়িতে যাই। বিকেল ৪টার দিকে মাদরাসার হুজুরদের ফোন থেকে কল করে জানানো হয় আপনার মেয়ে অসুস্থ। তাকে আমরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসছি, আপনারা আসেন। পরে আমার পরিবারের লোকজন হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পায় মাইশা মৃত। চিকিৎসক জানান, মাইশাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ১০ বছরের শিশু কীভাবে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করতে পারে? নিশ্চয় তাকে হত্যা করা হয়েছে।

মাইশার মা রুমা বলেন, আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমি খুনের বিচার চাই। মাদরাসার হুজুরই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আহসান উল্লাহ বলেন, বিষয় দুটি অনাকাঙ্খিত। আফরিন নামের মেয়েটি পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছিল। মাইশাও পরিবারের সঙ্গে অভিমান করেই এমন কাজ করেছে বলে আমাদের ধারণা।

মাধবদী থানার ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। কারা কী কারণে মেয়েটিকে হত্যা করল তা পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close