আনোয়ার হোসেন, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)
কৃষিতে নারীর কদর পান না ন্যায্য মজুরি
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে কৃষি কাজে পুরুষ দিনমজুরের তুলনায় নারী শ্রমিকের মজুরি কম হওয়ায় কদর বেড়েছে। এখন বিভিন্ন ইউনিয়ন মাঠে মাঠে চলছে আলু তোলা, ধান কাটামাড়াইয়ের মহোৎসব। এ মহোৎসবে পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশী। তবে ন্যায্য মজুরি যান না তারা। একজন পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪০০ টাকা, সেখানে নারী শ্রমিকের মজরি মাত্র ২০০ টাকা।
জানা গেছে, নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ আলু রোপণ, নিড়ানী, পরিচর্যা, উত্তোলন, ধান রোপণ, পরিচর্যা, কাটামাড়াইসহ অন্যান্য রবি শস্য বপণ ও হোটেল কিংবা বাসা বাড়ীতে সর্বত্র তাদের কদর বেড়েই চলছে। একই কর্ম ঘণ্টায় অর্ধেক মজুরিতে নারী শ্রমিক পাওয়ায় মালিক-কৃষক ঝুঁকছেন সেই দিকে।
এদিকে নারীরা পুরুষের সমান কাজ করেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে এমন অভিযোগ তাদের। অথচ নারীদের হাতে কৃষির গোড়াপত্তন ঘটলেও আজও যেন পাথরের মত খেটেই মরছে তারা। নারীর মর্যাদা রক্ষায় প্রতি বছর সরকারী-বেসরকারী ভাবে ঘটা করে বিভিন্ন দিবস, সভা-সেমিনার করা হলেও মাঠ পর্যায়ে নেই তার কোন প্রতিফলন।
সরেজমিনে পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর চৌধুরী পাড়া গ্রামের কৃষক ফজলে রাব্বী টিপু চৌধুরী জানান, বিভিন্ন রবি শস্য চাষাবাদ ও উত্তোলনে চলছে ভরা মৌসুম। পুরুষ দিনমজুর বিভিন্ন জেলায় গিয়ে উচ্চ মজুরিতে কাজ করছেন। এতে ৪০০ টাকা মজুরিতে পুরুষ দিনমজুর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পুরুষদের তুলনায় নারীর মজুরি অনেক কম হওয়ায় ২০০ টাকা দিতে হয়। এখন নারী কৃষি শ্রমিকরা কৃষি কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
মাগুড়া ইউনিয়নের উত্তর সিঙ্গের গাড়ী আক্কেলপুর গ্রামে দেখা যায়, ২০-২৫ জন নারী দলবেধে আলু নিড়ানী কাজে ব্যস্ত। এ সময় ফুলমতি রাণী, সন্ধ্যা রানী বলেন, ‘সৌওগ সওদাপাতির দাম বাড়ে হামার গিলার দাম বাড়ে না। বিয়ান (সকাল) বেলা থাকি বেলাডুবা পর্যন্ত কাম করি টাকা পাই ২০০। হাটত ঢুকার আগোত কাঁচা বাজারে টাকা ফুরি যায়। মাছ-গোসত মুকত (মুখে) চড়ে না।’
বাহাগিলি ইউনিয়নের উত্তর দুরাকটি গ্রামের মাঠে আলু তোলার সময় শিল্পী বেগম বলেন, ‘ঝাকুয়া খানেয়ালার সংসার। যা স্বামীর কামের টাকায় দিন যায় না। তাই বসি না থাকি মাইনষের গিলার জমিত ব্যাগারী কুলাই (কর্ম করি)। কামের চাপ আইলে পুরুষ গিলার দাম বাড়ে, হামার গিলার প্যাকে কাওয়ো দেখে না।’
সদর ইউনিয়নের বাজেডুমরিয়া পশ্চিম পাড়া গ্রামে আলু খেতে কাজ করা লতিফা বেওয়া বলেন, ‘স্বামী অনেক আগে মারা গেছে। সংসারে আয় রোজগারের কেউ নাই। তাই নিরুপায় হয়ে কম মজুরিতে কাজ করে কোন রকমে দিনাতিপাত করি।’
"