আবু সাইদ খোকন, আমতলী (বরগুনা)

  ২৯ নভেম্বর, ২০২২

দেশ-বিদেশে বাড়ছে শুঁটকির চাহিদা

আমতলীর বিষমুক্ত শুঁটকি রপ্তানিতে লাভের আশা জেলেদের

বরগুনার তালতলীতে পাঁচটি চরে বছরে প্রায় তিন-চার হাজার মণ বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে। এসব শুঁটকি পল্লীতে প্রতিদিন কাজ করছেন অন্তত চার হাজার শ্রমিক। তালতলীর বিষমুক্ত শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন জেলেরা।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক মৌসুমে তালতলী উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা,মরানিদ্রা, ছোট আমখোলা, বড় আমখোলা ও নিশানবাড়িয়া খেয়াাঘাটের চরে তিন থেকে চার হাজার মণ শুঁটকি উৎপাদন হয়ে থাকে। এই শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তালতলীর শুঁটকি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশে এবং দেশের বাইরেও শুঁটকির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, মরানিদ্রা, ছোট আমখোলা, বড় আমখোলা ও নিশানবাড়িয়া খেয়াাঘাটের চরে এখন শুঁটকি তৈরির ভরা মৌসুম। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ছয় মাস ধরে চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। এখানে প্রতিদিন প্রায় তিন-চার হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে কমপক্ষে তিন-চার লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। এ সময়গুলোতে সরব থাকে শুঁটকি পল্লীর ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকরা। প্রতিটি শুঁটকি পল্লী থেকে সপ্তাহে অন্তত দেড়শ মণ শুঁটকি বিক্রি হয়।

বঙ্গোপসাগর থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকি পল্লীতে নিয়ে আসার পর নারী এবং পুরুষ শ্রমিকরা সেগুলো পরিষ্কার করেন। এরপর মাছগুলো মাচায় এবং মাটিতে বিছানো পাটিতে বিছিয়ে শুকানো হয়। ছয়-সাত দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। প্রস্তুত থাকে ক্রেতা, পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। এই চরের শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। শুঁটকি প্রস্তুত করার সময় কোনো প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয় না বলে এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা ক্রেতাদের কাছে খুব বেশি।

বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৭০০-৮০০ টাকা, রূপচাঁদা এক থেকে দেড় হাজার, মাইট্যা ৮০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৬০০ থেকে ৭০০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৯০০ এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শুক্রবার আশারচর শুঁটকি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, শত শত শ্রমিক কাজ করছেন। সাগর থেকে একের পর এক ট্রলার এসে কিনারে ভিড়ছে। ট্রলার নোঙড় করা মাত্র শ্রমিকরা ট্রলারের খোল থেকে মাছ তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠে পড়ছেন। মাথায় মাছের ঝাকা নিয়ে ছুটছেন চরে। মাটিতে মাছ ফেলা মাত্র কেউবা মাছ ধুয়ে পরিস্কার করছেন। কেউবা আবার বড় মাছ ফালি করছেন। কেউবা আবার পরিস্কার করা মাছ মাচা কিংবা পাটিতে বিছিয়ে শুকানোর কাজ করছেন। এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

জেলে রহমান জানান, তালতলীর শুঁটকি পল্লীতে ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়। শুঁটকির মধ্যে রয়েছে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, বেরাগী, ফাইসা, তপসী, বাইন ও ছোট পোয়া অন্যতম। এছাড়াও চিংড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও রয়েছে অনেক চাহিদা। এখান থেকে ছোট চিংড়ি মাছের শুঁটকি পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরির জন্য সরবরাহ হয়ে থাকে।

খবির উদ্দিন নামে আরেক জেলে জানান, তালতলীর আশার চর, সোনাকাটা, মরানিদ্রা, ছোট আমখোলা, বড় আমখোলা ও নিশান বাড়িয়ার চরে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করে থাকি আমরা। মানুষের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে নিজেরাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুঁটকিতে বিষ মেশাবো না। রোদে শুকিয়ে প্রাকৃতিকভাবে শুঁটকি তৈরি করি আমরা। তাই আমাদের শুঁটকি দেশ এবং দেশের বাইরে অনেক চাহিদা রয়েছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. রূপচাঁন হাওলাদার বলেন, তালতলীতে উৎপাদিত শুঁটকি বিষমুক্ত হওয়ায় চাহিদা খুব বেশী। এখানকার শুঁটকি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা চালান করি। বিদেশেও তালতলীর শুঁটকির অনেক চাহিদা রয়েছে। এখানকার অনেক শুঁটকি স্থানীয় মানুষের মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে। সেখানে এর চাহিদা প্রচুর।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, বরগুনার তালতলীর আশারচর, সোনাকাটা, মরা নিনদ্রা, ছোট আমভোলা, বড় আমখোলা ও নিশান বাড়িয়ার চরসহ পাঁচটি চরে উৎপাদিত শুঁটকি স্বাস্থ্যসম্মত এবং বিষমুক্ত। তাই দেশ এবং দেশের বাইরেও রয়েছে এর প্রচুর চাহিদা। বিষেশ করে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন ও দুবাইতে শুঁটকির চাহিদা অনেক বেশী। এসব দেশে তালতলীতে উৎপাদিত শুঁটকি রপ্তানি করা গেলে জেলেরা অনেক লাভবান হবে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close