গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

চলনবিলে বাউত উৎসব

বন্যার পানি কমে গেলে বিলের খালে জমে থাকা পানিতে একসঙ্গে মাছ ধরার নাম বাউত উৎসব। সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত কোনো না কোনো অঞ্চলে প্রতিদিনি চলছে মাছ ধরা উৎসব। এতে ছোট বড় সব বয়সী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করে।

বিশেষ করে তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ উপজেলা গুমানি, বড়াল, গোহালা, ফুলজোড়, ইছামতি নদীসহ চলনবিলের সগুনায় কাটাবাড়ি বির ও গুমানী নদীর মোহনায় এবং পাবনার চাটমোহর ও নাটোরের সিংড়া গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন নদণ্ডনদী, খাল-বিল থেকে বর্ষার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী বাউত উৎসব শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঢাকঢোল পিটিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বিলের পানিতে নেমে ঠেলাজাল, তৈরাজাল, পলো (স্থানীয় ভাষায়) দিয়ে সৌখিন মাছ শিকারিরা মাছ শিকারে মত্ত হয়ে উঠেছেন। স্থানীয় ভাষায় এসব মাছ শিকারি দলকে বলা হয় বাউত। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার চলন বিলাঞ্চলের বিভিন্ন নদণ্ডনদী ও বিলের পানিতে মাছ শিকারে সবাই দলবেঁধে নেমে পড়ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মাছের আনাগোনা কম হওয়ায় বেশির ভাগ বাউতে অংশ গ্রহণ কারিদের ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। তাদের খালোই থাকে ফাঁকা।

সরজমিনে দেখা গেছে, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, রায়গঞ্জ, গুরুদাসপুর, সিংড়া, চাকমহর, ভাঙ্গুরার বিভিন্ন বিলে, করতোয়া নদীতে শত শত সৌখিন মাছ শিকারি মাছ শিকারে নেমে পড়েছেন। কেউ মাছ পাচ্ছেন আবার কেউবা ফিরছেন খালি হাতে। উল্লেখিত উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে বাউতরা এসেছেন মাছ শিকারে। বিলে নেমে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠছেন শিশু-কিশোর, যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা। পলো, চাক পলো, নেট পলো, ঠেলা জাল তৈরা জাল, বাদাই জাল, লাঠি জালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম নিয়ে মাছ শিকার করছেন বাউতরা। শোল, বোয়াল, গজার, দেশি মাগুর, রুই, কাতলাসহ নানা রকমের মাছ জালে ধরা পড়ছে। তবে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা কারেন্ট জাল ও কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার ফলে মাছের সংখ্যা কমে গেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

সচেতন মহল মনে করেন, অতীতে বাউত উৎসব অনেক হলেও এখন তেমনি আর হয়না। বর্তমানে জলাশয় ভরাট, বিলের তলায় পলি জমে তা আবাদী জমিতে পরিণত হওয়ায় বাউত উৎসব করে মাছ শিকার করার স্থানও কমে এসেছে। এজন্য সরকারের যথাযথ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

তাড়াশের বারুহাস গ্রামের সোনা মিয়া রায়গঞ্জের নীমগাছি মোতালেব, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চন্দ্রপুর এলাকার রাজ্জাক খান, সিংড়ার কলম এলাকার আলাউদ্দিন, চাটমোহরের আগশৈয়াইল গ্রামের মাহমুদ আলী, ভাঙ্গগুড়ার ভবানীপুর গ্রামের আক্কেল সেখসহ বেশ কয়েকজন জানান, (সৌখিন মৎস্য শিকারি) প্রতি বছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকেন তারা। মোবাইলের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলনবিল এলাকার বিভিন্ন বিলে পলো নিয়ে মাছ শিকারে নেমে পড়েন। দলবদ্ধ হয়ে মাছ ধরা এক ধরনের উৎসবে পরিণত হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। এছাড়া বাউত উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে প্রতি বছরই বাউত উৎসবে যোগ দেন বলে জানান তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close