আব্দুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

নারায়ণগঞ্জে ভূমিদস্যুদের দখলে রেলের জমি

প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও নেই পদক্ষেপ * জমি থেকে প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

নদী দখলের মত কয়েক যুগ ধরে অবৈধ ভাবে বেদখল হয়েছে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ের বিপুল পরিমান জায়গা। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই প্রভাবশালীরা এ দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। রেল লাইনের কোল ঘেষে কাঁচা-পাকা স্থাপনা এবং অবৈধ দোকান ও বস্তি বসিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অনেক টাকা। এতে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও কার্যত কোন সফলতা আসেনি। স্থানীয় রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ ও প্রভাবশালী ও পুলিশের অসাধু সিন্ডিকেট মাসোহারা নিয়ে স্থানীয় ভাবে দখল টিকিয়ে রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ১নং রেল গেইট থেকে ২নং রেল গেইট পর্যন্ত রেল লাইনের দুইপাশের ফাঁকা জায়গাতে চৌকি বসিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বছরের পর বছর ধরে তারা রেলওয়ের জায়গা দখল করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কিন্তু অতিরিক্ত জায়গা না থাকায় একদিকে রেল লাইনের উপরে দাঁড়িয়েই কেনাকাটা করতে হয় ক্রেতাদের অন্যদিকে রেল লাইনের উপর দিয়েই চলাচল করতে হয় পথচারীদের। এতে বিপত্তি ঘটে যখন ট্রেন আসে, তখনি বাধে হুলুস্থুল। ক্রেতা-বিক্রেতা পথচারী নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে থাকে। এতে প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা, প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তারপরেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। রেল লাইনের পাশের এই অবৈধ বাজার বা দোকানদারদের উচ্ছেদে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে হতাহতের সংখ্যা রেড়েই চলেছে।

আরো দেখা গেছে, রেল লাইনের দুই পাশে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বাজার। কাঁচা সবজি, শুঁটকি, ফল, মসলা, কাঁচের তৈজসপত্রসহ সব কিছুই বিক্রি করা হচ্ছে ওইখানে। রেল লাইনের পাশে দোকানগুলো এমন ভাবে বসানো হয়েছে যে ট্রেন আসলে দ্রুত রেল লাইন থেকে সরে আসার কোনো উপায় নেই। সারি সারি দোকান পার হয়ে তার পর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হয় ক্রেতা ও পথচারীদের। ট্রেন আসার পর হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকলে রেল লাইনের উপর থেকে সরতে পারছেন না ক্রেতা ও পথচারীরা। আর এতেই ঘটছে দূর্ঘটনা। প্রথমত এসব অবৈধ দোকানের জন্য দেখা যাচ্ছে না ট্রেন। আবার ট্রেন খুব কাছে আসলে দুই পাশের সারি সারি দোকানের জন্য রেল লাইন থেকে সরে নিরাপদ জায়গায় যেতে পারছে না মানুষ। আর এভাবেই ঘটে চলেছে হতাহতের ঘটনা।

৭ জুলাই মৃত্যু ঘটে নারায়ণগঞ্জে ছেলের বাসায় বেড়াতে আসা মঞ্জুরুল ইসলামের (৫০)। দূর্ঘটনার আশঙ্কা প্রসঙ্গে সেখানকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘যখন ট্রেন আসে তখন খুব সতর্ক থাকতে হয়। ট্রেন আসলে আমরা চিল্লায়া (চেঁচিয়ে) অন্য ব্যবসায়ীগো জানাই। ট্রেন আসলে দুরে সইরা যাই। এখন আর ভয় লাগে না। এখন অভ্যাস হইয়া গেছে।’

বাজার করতে আসা ফাহিমা বেগম বলেন, বাজার ভিতরে, এখানে সব পাওয়া যায়। তাই আর ভিতরে যাই না। ঝুঁকি থাকলেও সব সময় এখান থেকেই কেনাকাটা করা হয়। প্রতিনিয়ত এমন দূর্ঘটনা ঘটার পরেও কর্তৃপক্ষকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান, শুধু দখল করেই ক্ষ্যান্ত নয়, দখলের সঙ্গে রেল লাইনের দুইধারে বড় বড় মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেটেরা। তাতে একদিকে রেল লাইনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি যেমন বেড়েছে তেমনি জমি থেকে প্রাপ্ত বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এছাড়া এসব আখড়া থেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় মাদক ছড়িয়ে পড়ায় যুব সমাজ ধ্বংশের দিকে যাচ্ছে।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ২৯ একর রেলের জমি বেদখল হয়ে গেছে। দেশে চলমান নদীখেকো ও নদী তীর দখলকারীদের উচ্ছেদের ন্যায় রেলের জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও জোড়ালো পদক্ষেপ আশা করছে সচেতন মহল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close