কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অটোরিকশায় কমেনি এসএসসি পরীক্ষার্থী রবিনের দরিদ্রতা

রবিন মিয়া (১৬) একজন অটোরিকশা চালক। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। চাল-চলন কথাবার্তায় সবার চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। লেখাপড়ায়ও তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি রয়েছে। বড় ভাই সোহেল মিয়া অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে পারেননি। তাই প্রাইমারি গন্ডি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল তার লেখাপড়া। পিতার সঙ্গে কৃষিকাজ এবং অবসরে অন্যান্য কাজ করে চলছিল সংসার। এক পর্যায়ে ধারদেনা করে পাড়ি জমান প্রবাসে। একই হাল তার ছোট ভাই জুয়েল মিয়ার। অর্থাভাবে প্রাইমারি গন্ডি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল লেখাপড়া। অবশেষে পাড়ি জমান প্রবাসে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে দেশে এসে আর প্রবাসে যেতে পারেননি তারা। সংসারে আবার সেই অভাব অনটন দেখা দেয়। পরিবারের সবার ছোট রবিন মিয়া। বিশ্বে যখন করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে। এর ছোঁয়া লাগেছে তাদের পরিবারেও। ১১ সদস্যের এই সংসারে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তার লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সংসার চালানোর মতো যখন আয় রোজগারের কোনো উৎস ছিল না তখন রবিনের প্রবাস ফেরত বড় দুই ভাই মিলে একটি অটোরিকশা কিনেন। এই সুযোগটি নেন রবিন। তিনি তখন ৯ম শ্রেণির ছাত্র। তার লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য স্কুল সময়ের পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালান অটোরিকশা। এ থেকে যে টাকা উপার্জন হয়, নিজের খরচ রেখে বাকিটুকু সংসারের জন্য ব্যয় করেন।

রবিন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ মুমুরদিয়া গ্রামের মো. রমজান আলীর ছোটে ছেলে। সে হাজেরা সুলতানা উচ্চবিদ্যালয়ের একজন নিয়মিত ছাত্র। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি বলেন প্রথম দিন বাংলা প্রথমপত্র এবং শনিবার দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা ভালো হয়েছে। অন্যান্য বিষয়েও ভালো প্রস্তুতি আছে। ভালো ফলাফল হবে এমনটিই তার প্রত্যাশা। রবিনের বড় ভাই সোহেল মিয়া জানান, আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে রবিন সবার ছোট। সে লেখা পড়ায় ভালো। নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে যাচ্ছে। তার নিজের লেখাপড়ার খরচ সে নিজে অটো চালিয়ে জোগাড় করে।

রবিনের বাবা মো. রমজান মিয়া বলেন, আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১১ জন। আয় রোজগার বলতে কিছু নেই। প্রবাস ফেরত দুই ছেলে মিলে একটি অটোরিকশা কিনেছে। এটিই এখন একমাত্র ভরসা। রবিন শান্ত, সরল প্রকৃতির ছেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে সে অটোরিকশা চালায়। এতে সে লজ্জা বোধ করে না। বরং পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় রোজগারে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নিজের খরচের জন্য কারো কাছে হাত পাততে হয় না। রবিনের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই সে যেন জীবনে বড় হতে পারে।

মুমুরদিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য শামীমা আক্তার শাম্মী বলেন, রবিন ভালো ছেলে। নিয়মিত স্কুলে যায়, পড়াশোনা করে। আমি প্রত্যাশা করব পিতামাতার দরিদ্রতার কারণে শিক্ষা থেকে দূরে সরে না গিয়ে প্রত্যেক ছেলেমেয়ে যদি রবিনের মতো কর্মমুখী হয় তাহলে দেশ দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌঁছে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close