এএফএম মমতাজুর রহমান, আদমদীঘি (বগুড়া)

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আদমদীঘিতে শত বছরের পাতি মাদুর বিলুপ্তির পথে

বগুড়ার আদমদীঘিতে শত বছরের মাদুর তৈরির পাতি দেশজুড়ে খ্যাতি থাকলেও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেশিনের তৈরি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরি মাদুর এখন দেশের হাটবাজারগুলো দখল করে নিয়েছে। এর ফলে স্থানীয় চাষ করা পাতির তৈরি মাদুর দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার দেশ বিখ্যাত পাতির তৈরি মাদুর পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত এবং সেই মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ পাতির চাষ বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। পাতি ও মাদুরের স্থান দখল করতে শুরু করেছে ভারতীয় প্রযুক্তিতে প্লাস্টিকের তৈরি কৃত্রিম পাতি। নতুন ধরনের ও দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ার কারণে প্লাস্টিকের তৈরি রঙিন চোখ ধাঁধানো পাতি (পাইপ) ও মাদুর তৈরির কারখানা স্থাপন ও বিক্রির ধুম পড়েছে। বেড়েছে ব্যাপক কদর। ফলে পাতি চাষ ও মাদুর উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। এখনো যারা চাষ করা পাতির মাদুর তৈরিতে নিয়োজিত তারা বাহারি নকশা করতে না পারলেও পাতিতে রং করে মাদুর তৈরি ও বাজারজাত করছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে দেশবিখ্যাত বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার হেলালিয়া হাটের প্লাস্টিক ও প্রাকৃতিক পাতির তৈরি মাদুর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাহারি রং ও নকশা করা কৃত্রিম পাতির মাদুরের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জমে উঠেছে মাদুর হাট ও কারখানা স্থাপন কার্যক্রম। পাইপ তৈরি ও মাদুর বুননের স্বয়ংক্রিয় কারখানায় চাকরির পাশাপাশি অনেক বেকার নারী-পুরুষ নতুন প্রযুক্তির পাইপ দিয়ে বাড়িতে হাতে বুনছেন নক্সা ছাড়া মাদুর। আয়ও করছেন বেশ। সপ্তাহে দুই দিন রবিবার ও বৃহস্পতিবার কাক ডাকা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত খুচরা ও পাইকারি বেচা-কেনার ধুম পড়ে যায় আদমদীঘি উপজেলার হেলালিয়া হাটে। এখানকার হাতে ও স্বংক্রিয় মেশিনে তৈরি বাহারী কারুকাজে ভরা মাদুর দামে কম হওয়ায় এর চাহিদা ব্যাপক।

জানা গেছে, পাশের হেলালিয়া, ছাতনী, ঢেকড়া, তারাপুর, কাশিপুর, সান্দিড়া, চকজান, প্রান্নাথপুর ও পাশের রাণীনগর উপজেলার কিছু অংশে পাতি চাষ ও পাতি দিয়ে তৈরি মাদুরের সুখ্যাতি ছিল। গত পাঁচ/ছয় বছর আগে আদমদীঘির হেলালিয়া হাটের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ছাতনী, সান্তাহারের পাশের মাদার মোল্লা এবং রাণীনগরের ত্রিমোহনী এলাকায় প্লাস্টিকের পাতি (পাইপ) তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়। এরপর থেকে পাতি দিয়ে তৈরি মাদুরের পাশাপাশি প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তৈরি মাদুরের চাহিদাও দিন দিন বাড়তে থাকে। আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া, তারাপুর, কাজিপুর, ছাতনী, ঢেকড়া, প্রান্নাথপুর, পানলা, চকজান, দরিয়াপুর, সান্তাহার পৌরসভার মালশন এলাকায় শত শত বেকার মানুষ প্লাস্টিকের মাদুর তৈরি করে হাটে-বাজারে বিক্রির মাধ্যমে ভাল আয় করছেন। বেকার থাকা মানুষগুলো স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ ও অল্প পারিশ্রম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। ৩/৪ হাত লম্বা প্রতিটি প্লাস্টিক মাদুর নক্সা ভেদে পাইকারি ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা তৈরিতে খরচ পড়ে ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। বর্তমানে এ ব্যবসা জনপ্রিয় ও লাভজনক হওয়ায় চাষ করা পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত পাতির তৈরি মাদুর ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে। এই শিল্পে জড়িত অনেকেই জানান, তারা পারিবারিকভাবে অনেক আগে থেকেই মাদুর তৈরি ও বিক্রির সাথে জড়িত। তারা প্লাস্টিক মাদুর তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে। বর্তমানে এই ব্যবসা করে তারা স্বাবলম্বী হয়েছে।

সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাহিদ সুলতানা তৃপ্তি জানান, বেশ কয়েক বছর আগে প্লাস্টিক পাইপ ও মাদুর তৈরির স্বয়ংক্রিয় কারখানা চালু করি। প্রথমদিকে চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে এই শিল্পের ব্যাপক চাহিদার কারণে ব্যবসা ভাল হচ্ছে। এই শিল্পে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রান্ত্রিক জনপদে এই ব্যবসার আরও প্রসার ঘটার সম্ভবনা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close