সুমন ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ফুঁসে উঠেছে পদ্মা ভাঙন আতঙ্ক

* দেড় কিলোমিটার ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন * ১০ পরিবারের বসতভিটা পদ্মায় হারিয়ে দিশাহারা

বর্ষা মৌসুম শেষ না হতেই মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের বাংলাবাজারে ফুঁসে উঠেছে প্রমত্তা পদ্মা। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও ¯্রােতের তীব্রতায় ভাঙ্গনে তীরবর্তী দেড়-কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন আতংকে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন শতাধিক পরিবার। বাংলাবাজার ইউনিয়নের সরদারকান্দি, শম্ভু হালদারকান্দি, মহেশপুর ও শান্তনগর গ্রামে চলছে এ ভাঙ্গন তান্ডব। আশংকায় রয়েছে ওই ইউনিয়নের ইসলামপুর, ভুতারচর ও বাংলাবাজার গ্রাম।

জানা গেছে, শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ওইখানে ভাঙ্গন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আপাতত ৪১ হাজার জিও ব্যাগ ও ১ হাজার জিও টিউব ফেলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সরদারকান্দি গ্রামে একটি মন্দির ও অন্তত ১০ টি পরিবারের বসতভিটে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে রাতের ভাঙ্গনে অন্তত ৫০০ মিটার নদী গর্ভে চলে গেছে। বাংলাবাজার ইউনিয়নের ৪ টি গ্রামের শতাধিক পরিবার আগেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের ভাঙ্গনে জাহানারা, অপূর্ব, সঞ্চয় ও নির্মলসহ ১০ টি পরিবারের বসতভিটে ভাঙ্গনের তীব্রতায় হারিয়ে গেছে পদ্মায়।

ইউনিয়নের সর্দারকান্দি গ্রামের আলী মিয়া সৈয়াল বলেন, ‘এ যাবত পদ্মা গর্ভে সর্দারকান্দি ও শম্ভু হালদারকান্দি গ্রামের বিঘার পর বিঘা ভিটেবাড়ি নদীতে ভাইঙা লইয়া গেছে। গত কয়েক দিনে মোখলেছ, তাইজুল ইসলাম, হাতেম সৈয়াল, কাজল সৈয়াল, সাইফুল, আলেয়া, ইমরান আশরাফ উদ্দিন, রাজাউল্লাহ, আল-আমিন, বিল্লাল ফকির, জসিম উদ্দিন, নান্নু, আমিন, মোবারক, রাজ্জাক সরদার,রেজাউল্লাহ, নয়া মিয়া, হরিছ সৈয়াল, চম্পা বেগম, নাসির মাঝি, বাবুল মাঝি সহ আরো অনেকের বসতভিটা নদী ভাইঙা নিয়া গেছে।’

একই গ্রামের মাকসুদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কৃষি কাজ করে। অনেক কষ্টে একটা বিল্ডিং তুলছিল। কিন্তু বিল্ডিংটা নদীতে ভাইঙা লইয়া গেলো। এখন আমরা কোথায় যাই। রাতে মানুষের বাড়িতে গিয়ে থাকি। দিনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। সরকার যদি আমাদের একটু সাহায্য করলে, খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারতাম।’

মায়া বেগম বলেন, ‘৪-৫ দিন আগে আমার বসতঘর সরিয়ে নিয়েছি। খুব শখ করে অনেক গুলো মুরগি পালতাম। মুরগির খোয়ারটা এখানেই ছিল। আজ মুরগি আর খোয়ার দুইটাই বিক্রি করে গেলাম। নিজেদের থাকারই তো জায়গা নাই, মুরগি পালব কেমনে। ঘর ভেঙে নিয়ে অন্য স্থানে রাখছি। ভিটাটার মায়া ছাড়তে পারি না। রান্না-বান্না করি না। ভিটায় এসে বসে থাকি। ’

এদিকে আরো জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌরসভার মেয়র হাজ্বী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব এখানকার ভাঙন কবলিত ১৪৫ টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৩০০০ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, প্রতিদিনই পদ্মায় ভাঙ্গছে। ইতোমধ্যে ১ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গন হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে আমরা তাৎক্ষনিক ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বরাদ্দ পেয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে ৪১ হাজার জিও ব্যাগ ও ১ হাজার জিও টিউব ফেলা হবে। এ কাজ শেষ করতে ৭ দিন সময় লাগবে। আশা করি ভাঙ্গনের তীব্রতা কমবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close